পুলিশ বাহিনীর ১ লাখ ৭৭ হাজার সদস্য ফুরফুরে মেজাজে জঙ্গি মোকাবিলায় জনমনে পুলিশ সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব
আজাদ হোসেন সুমন: সফলতার সঙ্গে দেশে জঙ্গি মোকাবিলার কারণে জনমনে পুলিশ সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সরকারের কাছেও পুলিশের গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পুলিশ বাহিনীর ১ লাখ ৭৭ হাজার সদস্য রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে।
জানা গেছে, পুলিশ ’৮৯ সাল থেকে জাতিসঙ্ঘের হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। বরাবরই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সাহসিকতা, দৃঢ়তা, নিষ্ঠা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে কাজ করায় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ পুলিশের ঈর্ষণীয় ভাবমূর্তি গড়ে উঠে। কিন্তু দেশেই সে অনুযায়ী পুলিশ সুনাম অর্জন করতে পারেনি। পুলিশ সম্পর্কে জনমনে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা বিদ্যমান ছিল। অবশ্য এর সঙ্গত কারণও রয়েছে। পুলিশের মাঠপর্যায়ের অসদাচরণ, অসহযোগিতা, থানায় গিয়ে আইনের আশ্রয় না পাওয়া, থানাগুলো নারী ও শিশুবান্ধব না হওয়া, রাজনৈতিক যথেচ্ছ ব্যবহৃত হওয়াসহ নানাবিধ। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পুলিশে ৫০ হাজার লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। ইন্সপেক্টরদের প্রাণের দাবি প্রথম শ্রেণির মর্যাদাটিও পূরণ করে শেখ হাসিনার সরকার। আবাসন, যাতায়াত, যানবাহন নানা সমস্যার সমধান করে দ্রুত পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকায়ন করা হয়। ফলে তথ্য প্রযুক্তিতেও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যায় পুলিশ। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়। পুলিশ বাহিনীতে আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগার কারণে সাধারণ জনমনে বিদ্যমান পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার পরিবর্তন হতে থাকে। সবশেষ গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গি দেশে শক্ত অবস্থানের কথা জানান দেয়। এই ঘটনাসহ দেশের কমপক্ষে ১০টি ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গিদের মোকাবিলা করে। একের পর এক মাস্টারমাইন্ড জঙ্গিরা ধরা পড়ে। কোনো ঘটনায় পুলিশ আহত আবার কোনো ঘটনায় নিহত হয়। দেশ থেকে জঙ্গি অনেকটাই নির্মূল হয়। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গি দমনে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকায় সন্তুষ্ট হন। দেশ-বিদেশে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় গত পরশু বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বসুন্ধরা এলাকায় একটি থানা প্রতিষ্ঠার জন্য পুলিশকে ৫০ কাঠা জমি অনুদান দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইজিপি একেএম শহীদুল হক ও পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে আহমেদ আকবর সোবহান পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, পুলিশ জনগণের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। ফলে জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়েছে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা বলেন, পুলিশের সার্ভিসে তুলনামূলক নতুনত্ব এসেছে। পুলিশ সম্পর্কে অভিযোগও তুলনামূলক কমেছে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় পুলিশ বাহিনীর অগ্রণী ভূমিকার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
পুলিশের বদলে যাওয়া প্রসঙ্গে আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, পুলিশ এখন অনেক পরিপক্ক একটি বাহিনী। প্রধানমন্ত্রী পুলিশ বাহিনীতে বিদ্যমান বহু সমস্যার সমাধান করেছেন। পুলিশ বাহিনী একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। পুলিশ বাহিনীর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ব্যক্তির দায় এখন পুলিশ নেয় না। কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অন্যায়-অনিয়ম, অপরাধে জড়িত প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আবার ভালো কাজ করলে সেটার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থাও আছে। পুলিশ প্রধান আরও বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু হিসেবে কাজ করছে বলেই পুলিশ সম্পর্কে জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। সম্পাদনা: শাহানুজ্জামান টিটু