ডিম খেয়ে ১১৬ বছর!
তার বর্তমান বয়স ১১৬ বছর এবং তিনি ডিম পাগল। অর্থাৎ ডিম খেতে তিনি খুবই পছন্দ করেন। বলা হচ্ছে, এমা মোরানোর কথা। এই নারী এখন বিশ্বের সবচেয়ে বয়ষ্ক ব্যক্তি। শুধু তাই নয়, তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর একমাত্র জীবিত মানুষ।
চলতি মাসের ২৯ তারিখে তার ১১৭তম জন্মদিন। জন্মদিনে তিনি কাউকে আমন্ত্রণ জানাবেন না। কারণ তিনি ভালো করেই জানেন, ভক্ত শুভানুধ্যায়ীরা তাকে সেদিন ঘিরে ফেলবে! এ বয়সে এতটা হৈ চৈ তার আর সহ্য হবে না। ‘মানুষ আসবে। জন্মদিনে আমার কাউকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে না, তারপরও তারা আসবেই। যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, তুরিন, মিলান বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা আসবে আমাকে দেখার জন্য।’ পাকিস্তানের অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে তিনি এ কথা বলেন।
১৮৯৯ সালের ২৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করা এমা দীর্ঘজীবনের কারণে গিনেজ বুকে জায়গা করে নিয়েছেন। যা হোক, নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে ইতালির এই নারীর এত বছর বেঁচে থাকার রহস্য কী? রহস্য হচ্ছেÑ ডিম। প্রচুর ডিম এবং তারপর আরও কিছু বিষয়। ২০ বছর বয়সে রক্তশূন্যতা ধরা পড়ার পর, এমাকে তার চিকিৎসক উপদেশ দিয়েছেন, প্রতিদিন ৩টি করে ডিম খাওয়ার জন্য (২টি কাঁচা ডিম এবং ১টি রান্না করা ডিম)। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে তিনি এর সংখ্যা দুইয়ে নামিয়ে আনেন। এএফপিকে এমা বলেন, ‘আমি বর্তমানে প্রতিদিন ২টি করে ডিম এবং বিস্কুট খাই। যেহেতু আমার এখন দাঁত নেই, তাই এর বেশি খেতে পারি না।’
৯০ বছর বয়স থেকে তিনি বর্তমান খাদ্যরুটিন মেনে আসছেন এবং এখনো পর্যন্ত তিনি ১ লাখেরও বেশি ডিম খেয়েছেন। এটাও তার আরেকটি বিশ্ব রেকর্ড। অর্থাৎ জীবনকালে একজন মানুষের সবচেয়ে বেশি ডিম খাওয়ার রেকর্ড এটি। এমার চিকিৎসক কার্লো বাভা। তিনি ২৭ বছর বয়স থেকে এমাকে চেনেন। তিনি বলেন, ‘এমা তার জীবনে সবসময়ই পরিমিত সবজি ও সামান্য ফল খেতেন। যখন থেকে তার সঙ্গে আমার পরিচয়, আমি তাকে দেখেছি, প্রতিদিন ৩টি করে ডিম তার সকালের খাদ্য তালিকায় রয়েছে। দুপুরে একটি অমলেট এবং রাতে মুরগির মাংস।’
তবে এমার বয়স কিংবা খাদ্যাভাস শুধু অনুপ্রেরণার নয়, তার জীবনও অনুপ্রেরণার। তার একমাত্র শিশু সন্তানের মৃত্যুর পর ১৯৩৮ সালে অভদ্র স্বামীর সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়। এরপর থেকে তিনি নিজেই নিজের জীবনযাপনের দায়িত্বপালন করে আসছেন। তিনি খোলামেলাভাবেই তার দীর্ঘ ও সুখি জীবনযাপনের ক্ষেত্রে একা থাকার বিষয়টিকে ক্রেডিট দিয়েছেন। তার স্ব-প্রয়োগকৃত শৃঙ্খলা এক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে সন্ধ্যা ৭ টায় ঘুমিয়েছেন এবং ঘুম থেকে উঠেছেন প্রতিদিন সকাল ৬টায়। এমা তার পরিবারের একমাত্র প্রত্যক্ষ জীবিত সদস্য এবং তিনি গত ২০ বছর ধরে বাসায় একাকি বসবাস করছেন। যাই হোক, এমার দীর্ঘায়ুর ব্যাপারটির ক্ষেত্রে পরিবারের জিনগত বৈশিষ্ট্যও উপেক্ষা করা যাবে না। কারণ তার মা বেঁচে ছিলেন ৯১ বছর। তার আরও দুই বোন ১০০ বছর বেঁচে ছিলেন। কিন্তু এমা এখন আর একা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। অনেক বছর একাকি বসবাসের পর, গত বছর থেকে তার জীবনযাপন বিছানার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। যে কারণে একজন কেয়ারটেকার রেখেছেন তিনি। এমা খুবই দৃঢ়প্রত্যয়ী। তিনি কখনো হাসপাতালে যেতে চাননি, কোনো নির্দিষ্ট যতœ (স্বাস্থ্য) গ্রহণের প্রয়োজনও হয়নি। তিনি কিছুটা ব্রংকাইটিস, (রক্ত) ট্রান্সফিউশন রোগে ভুগছেন এবং জীবনে বিভিন্ন ঘটনায় শরীরে কিছু জায়গায় সেলাই নিতে হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি।
এমা বিনোদনের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডি পান, ঘুম, পরিমিত খাবারÑ এভাবে জীবন উপভোগ করেছেন। এছাড়া তিনি চকলেট খেতে এবং গান গাইতে পছন্দ করেন। ইতালির প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে পোপ ফ্রান্সিস পর্যন্ত সকলের কাছ থেকে তিনি অভিনন্দন পেয়েছেন। তিন শতাব্দী দেখা এই ভদ্র মহিলাকে জন্মদিনের অগ্রিম শুভেচ্ছা। সূত্র: রাইজিংবিডি