এমন আসামি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!
রহমান শেলী
ডাকাতি, সাথে হত্যা। আমরা আসামি খুঁজছি। সোর্স জানাল, আসামি একটা বাজারে আছে। দ্রুত আসুন। দ্রুত আসলাম। আমরা চারদিকে। সবাই সিভিল পোশাকে। কেউ সামনে, কেউ পেছনে। কেউ উত্তরে, আবার কেউ দক্ষিণে। আসামির আর পালানোর সুযোগ নেই। আসামি ধরা পড়বেই। খোঁজা শুরু হলো। বাজারের ভেতর ও বাহির। বাদ নেই কোথাও। দুই একজনকে সন্দেহ হলো। সোর্সকে ফোন দিলাম। জানতে চাইলাম, গোঁফ আছে নাকি? বলল, না, কোনো গোঁফ নেই।
প্রায় দুই ঘণ্টা হয়ে গেল। সবাই হতবাক। আসামি তাহলে কোথায়? ফোন করলাম সোর্সকে আবার। সোর্স বলল, তথ্য সঠিক। কিছুক্ষণ আবার খোঁজা হলো। তাতেও পেলাম না। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। ব্যর্থ প্রেমিকের মতো। মন বিষণœœ! মেজাজ খারাপ। আজ আর পাওয়া যাবে না। নিশ্চয়ই বেটা… পালিয়েছে আজ! হয়তো কোনোভাবে টের পেয়েছে! দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছক্ষণ। আমার কিছু দূরে একজন মাংস বিক্রেতা। তিনি নেমে আসলেন আমার কাছে। এসে সালাম দিলেন। আমি সালামের উত্তর দিলাম। তিনি আমার মুখোমুখি, সামনে। আমার দিকে তাকালেন। একটান দিয়ে তার ঠোঁটের উপরের গোঁফটা ছিড়ে ফেললেন। আমি খুবই ভয় পেলাম। বললাম, ভাই এটা কী করছেন? তিনি বললেন, আপনারা যাকে খুঁজছেন। আমি সে আসামি।
আমার গোঁফ ছেড়া দেখে যে ভয় হলো, সেই ভয় চলে গেল। ভয়ের জায়গায় সাহসী হলাম। সিনা ফোলালাম। বলতে চাইলাম, হারামজাদা, মার্ডার উইথ ডাকাতি করে পালাইছিস! আবার কথা বলিস! বললাম না। কারণ, সে নিজ থেকে ধরা দিয়েছে। বললাম, বাঘের বাচ্চা! আসামি হলে এমনই হওয়া উচিত!
আসামী বলল, স্যার, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে দেখলাম, আপনারা আমাকে খ্ুঁজছেন। ভাবলাম, এত কষ্ট করছেন আমাকে ধরার জন্য। বিষয়টা দেখে নিজের কাছেই খারাপ লাগল। তাই সহসায় এসে ধরা দিলাম।
আমি আবারও একটা গালি দিতে চাইলাম। দিলাম না। স্মার্ট আসামি! আমার দুই ঘণ্টা ধরে আসামি খোঁজা কষ্টকে সম্মান দিয়েছে। এর মধ্যে আমার সহযোগী একজন অফিসার আসলেন। তার এক হাতে একটি হাতকড়া। চোখের সামনে এনে ধরলেন। আসামিকে হাতকড়া লাগিয়ে দিলেন এক মুহূর্তে। বললাম, ওর হাতকড়া খুলে দাও! অফিসার বললেন, বলেন কী স্যার! এতবড় আসামি হাতকড়া পড়াব না? না, পড়াবেন না। স্যার, ও যে বড় আসামি, ওকেতো ডান্ডাবেড়ি পড়ানোই উচিত। আর আপনি বলছেন ছেড়ে দিতে!
কথার উত্তর দিলাম না। হাতকড়া খুলে দেয়া হলো। আসামিকে বললাম, আপনাকে থানায় যেতে হবে এখন। আসামী বলল, স্যার, আজ বাসায় ছোট বাচ্চার ভীষণ জ্বর। তার জন্য ওষুধ নিয়ে যেতে হবে। আগে নেননি কেন? (কথাটা আসলে এমনিই বললাম। এখন জ্বর হয়েছে আগে নিব কীভাবে!)
আসামী বলল, স্যার, জ্বর দুইদিন ধরে। ভয়ে কোথাও যাই না। পালিয়ে থাকি। আজ সাহস করে বাজারে এলাম। যদি কোনো কাজ পাই। ঘরে ওষুধ কেনার মতো কোনো টাকাও নেই। আমি আর কিছু শুনতে চাইলাম না। পকেটে হাত দিলাম। কিছু টাকা ছিল পকেটে, মোট করে দিয়ে দিলাম। আসামি কিছু একটা বলতে চাইল। বললাম, আর কথা নয়। বাড়ি যাও। বাচ্চাকে সুস্থ করো। আর সাথে বললাম, সুস্থ হলে থানায় এসে সারেন্ডার করবে।
আসামী খুবই কৃতজ্ঞ ভঙ্গিতে মাথা নোয়াল। ধীর পায়ে সামনের দিকে হেঁটে চলে গেল। আমার সহযোগী অফিসারদের বললাম, চলো।
ওরা হা করে তাকিয়ে থাকল আমার দিকে। আমি আবার বললাম, চলো। ওরা এবার আমার সঙ্গে হেঁটে চলল। আর কিছু বলল না …!
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও এডিশনাল এসপি
সম্পাদনা: আশিক রহমান