মুসলিম-হিন্দু হয়েছি, মানুষ হয়েছি কী?
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ সারা দেশে একদল মানুষ মন্দিরে, হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসীদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন থেকেও সব ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। ভারতের অযোধ্যা, মথুরা, লক্ষনৌ থেকে আন্দামান পর্যন্ত ভ্রমণ করে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি। মিয়ানমার থেকে ইন্দোনেশিয়ার দুর্গম অঞ্চলে ভ্রমণসহ তেরটি দেশ ভ্রমণ করে বিশ্বাসীদের দেখেছি, নিয়মিতভাবে তারা মন্দিরে যাচ্ছেন, মসজিদে যাচ্ছেন, প্যাগোডায় যাচ্ছেন, গির্জায় যাচ্ছেন। ধর্মীয় পুরোহিতদের কাছ থেকে ধর্মগ্রন্থের মহামূল্যবান বাণী শিখছেন। প্রত্যেকেই যার যার বাড়িতে একটি করে ধর্মগ্রন্থ’ নিয়ে আসছেন। শোপিছের মত সেই ধর্মগ্রন্থকে সাজিয়ে রেখেছেন, কিন্তু প্রত্যেক ধর্ম বিশ্বাসীরা যদি যার যার ধর্মগ্রন্থ’ পাঠ করেন তাহলে সারা পৃথিবীতে ধর্ম নিয়ে যে হানাহানি হচ্ছে তা অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যেক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্ব-স্ব ধর্ম বিশ্বাসীদের অন্য ধর্মের প্রতি বিরুপ ধারণা শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একজন ছাত্র আর একজন ছাত্রকে বন্ধু ভাবার আগে তার ধর্মীয় পরিচয় জানতে চাচ্ছেন। যদি জানতে পারেন তার সহপাঠী বন্ধু তার ধর্ম বিশ্বাসী নন, তাহলে তার প্রতি বিরুপ ধারণা জন্মে যায়।
পিতা-মাতারাও সন্তানকে মানুষ করার চাইতে ধর্মীয় মানুষ আগে করতে চাচ্ছেন। মানবতা লোপ পেলেও ধর্ম ঠিক থাক এটাই সব ধর্ম বিশ্বাসীরা চান বলেই প্যালেস্তাইনের মুসলমানরা ইসরাইলী ইহুদীদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন। আরাকানের রহিঙ্গা মুসলমানরা বৌদ্ধদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন। ভারতের হিন্দুদের দ্বারা শিখ, খ্রিস্টান ও মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছেন। আমাদের দেশে মুসলমানদের দ্বারা হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধরা নির্যাতিত হচ্ছেন। অপরাধ তারা অন্য ধর্মের বিশ্বাসী। প্রত্যেকেই মুসলমান হতে পেরেছে, হিন্দু হতে পেরেছে, খ্রিস্টান হতে পেরেছে, বৌদ্ধ হতে পেরেছে, ইহুদী হতে পেরেছে, শিখ হতে পেরেছে। তাই তারা নিজেদের ছাড়া অন্য ধর্ম বিশ্বাসীদের মানুষ ভাবতে পারছেন না। পরম করুণাময় দয়াময় আল্লাহ, সূর্যের রশ্মি ও চন্দ্রের কিরণ সকল ধর্ম বিশ্বাসীদের ও অবিশ্বাসীদের সমানভাবে দিয়ে যাচ্ছেন। স্র্রষ্টার সকল নেয়ামত সমানভাবে বন্টন হচ্ছে। কোথাও কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম বিশ্বাসীদের জন্য অতিরিক্ত কিছু বরাদ্দ হচ্ছে না। কারণটা কি? পরম করুণাময় সৃষ্টির সব সৃষ্টিকেই ভালবাসেন। ভালবাসেন বলেই তিনি নিরপেক্ষ। আলাদাভাবে তার কাছে অতিরিক্ত গ্রহণযোগ্যতার কারোর যেমন নেই তেমনি কাউকে কখনোই বঞ্চিত করেন না। মানুষ যখন অসহায় হয়ে পড়েন তখন শেষ পর্যন্ত প্রভুর কাছে স্মরণাপন্ন হয়ে পড়ে। কারণ প্রভু কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বা ধর্মীয় বিশ্বাসীদের সাথে থাকেন না, প্রভু থাকেন নির্যাতিত মাুনষের অন্তরে। যে অন্তরে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করেছে। যারা মানুষ হয়েছে, মানুষের মতো মানুষ হয়েছে তাদের কাছে সব ধর্ম বিশ্বাসীদের প্রতি থাকবে ভালবাসা। আর যদি না হয়ে থাকে তাহলে শুধু বাংলাদেশ কেন, সারা পৃথিবীতে সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বলতে থাকবে।
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান