ফেসবুকে বাংলাদেশ…
রাজনীতি আসলে শুধুই মিথ্যার পারদর্শিতা…
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, পরিচালক বার্তা, একাত্তর টেলিভিশন
রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই আমল ছাড়া কোনো আমলেই এক সম্প্রদায় আরেক সম্প্রদায়ের উপর হামলা করেনি…। তাহলে বাবরি মসজিদ ঘটনার পর কিংবা ২০০১ এর নির্বাচনের পর কে কার উপর হামলা করেছিল? কারা ২০০১ এর নির্বাচনের পর ধর্ষণের উৎসবে মেতেছিল? রাজনীতি আসলে শুধুই মিথ্যার পারদর্শিতা…।
শোনো হে মানুষ ভাইÑ সবার উপরে মানুষ সত্য…
আশীফ এন্তাজ রবি, সাংবাদিক ও সঞ্চালক
ভাই রে, আমি এখন কথা বলতে খুব ভয় পাই। তবুও অত্যন্ত বিনয় নিয়ে কয়েকটা কথা বলতে চাই। যদি অনুমতি দেন। যদি আমার কথা আপনার ভালো না লাগে, তাহলে লেখাটি স্কিপ করে যান। ফেসবুকে আরও শত শত লেখা আছে, সেটি পড়ুন। আমি এক স্বল্প শিক্ষিত মানুষ, আমার কথাকে গুরুত্ব দেবার সত্যিই কিছু নেই।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলে আমাদের এত জ্বলে কেন? উনি বলেছিলেন, একদা আমেরিকা অতি শ্রেষ্ঠ একটা জাতি ছিল। এরপরে এই দেশে বহু বিদেশি সংখ্যালঘু এসে, দেশটাকে পুরো গোল্লায় নিয়ে গেছে। তারা চাকরি-বাকরিতে ভাগ বসিয়েছে, ব্যবসা দখল করেছে। ফলে আমাদের ভাগে কম পড়েছে। কিন্তু তারা তো আমাদের কেউ না! আসুন, ওদেরকে ভাগিয়ে নিজেরা নিজেরা থাকি। নিজেদের সুরক্ষিত করার জন্য আমরা সীমান্তে দেয়াল বসাব। আসুন, এভাবেই আমাদের দেশকে আবার শ্রেষ্ঠ বানাই। মানুষ তার কথা গিলেছে। ভোট দিয়েছে।
একই কা- ঘটেছে ব্রিটেনে। ইউরোপের আরও দশটা দেশের সঙ্গে তারা থাকবে না। কারণ তারা সেরা। তারা ভোট দিয়ে ‘ব্রেক্সিট’ করেছে। আমেরিকা চলছে আমেরিকান চেতনায়। ব্রিটেন চলছে ব্রিটিশ চেতনায়। ঠিক যেভাবে আপনি আমি বিশ্বাস করি আমাদের ‘চেতনায়’।
আজ ট্রাম্প জিতলে আমাদের জ্বলে কেন? রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যখন নৌকায় করে আমাদের এখানে আশ্রয় নিতে চেয়েছিল, আমরা কি আমাদের চেতনায় জ্বলে উঠে তাদেরকে খেদিয়ে দিইনি? সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আসা সেইসব অসহায় পরিবারদেরকে আবারো গভীর সমুদ্রে ঠেলে দিয়ে আমরা কি আমাদের দেশপ্রেমের পরীক্ষা দিইনি?
একই ঘটনা সারাবিশ্বে ঘটছে। যখন মানুষের চেয়ে চেতনা বড় হয়, তখন অন্ধকার নেমে আসে। সেই অন্ধকার কখন টের পাওয়া যায় জানেন? যখন আপনি নিজে অন্য কোনো দেশে সংখ্যালঘু? মুসলমানদের দেশে মুসলমান হয়ে জন্মেছেন বলে, এই বেদনা টের পাচ্ছেন না। যদি হিন্দু হয়ে জন্মাতেন, যদি সাওতাল হয়ে জন্মাতেন, তাহলে বুঝতেন মালাউন হয়ে বেঁচে থাকা কত বেদনার। তাহলে বুঝতেন, চেতনা এবং ধর্মের চেয়ে আরও বড় একটা বিষয় আছে। তার উপরে আর কোনো বিষয় নেই। মানবতা। শোনো হে মানুষ ভাইÑ সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।
এই করুণ দৃষ্টির কোনো জবাব আছে?
ডা. ইমরান এইচ সরকার, মুখপাত্র, গণজাগরণ মঞ্চ
এই করুণ দৃষ্টির কোনো জবাব আছে? এদের বাড়ি-ঘর, সহায়-সম্বল এমনকি গবাদিপশুও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। খোলা আকাশের নিচে অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সাঁওতাল গ্রামের এইসব মানুষ। গণমাধ্যমে দেখলাম, বাধ্য হয়ে এমনকি নিজের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথাও ভাবছেন এইসব মানুষ। এই লজ্জা আমাদের সবার, এই লজ্জা বাংলাদেশের।
আমেরিকা কি আবার গ্রেট হবে?
পিনাকী ভট্টাচার্য, চিকিৎসক ও কলামিস্ট
আমেরিকা কি আবার গ্রেইট হবে? এক কথায় না। গ্লোবাল ইকোমিক পাওয়ার এশিয়াতে স্থানান্তরিত হবে ২০৫০-এর মধ্যেই। আর এই পাওয়ার সেন্টার আর কখনোই পশ্চিমে ফিরে যাবে না। এটা আমার কথা নয়, বুশ আমলে করা অ্যামেরিকান ন্যাশনাল সার্ভে ইন্সটিটিউটের সরকারি রিসার্চের কথা। ২০১৮ সালেই চিন আমেরিকার ইকোনমিকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ইকোনমি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। তার মানে ট্রাম্পের গ্রেট বানানির সময়ের মধ্যেই আমেরিকা তার অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের আসন হারাবে। ইন্টারেস্টিং হচ্ছে, কার কাছে হারাবে? হারাবে চিনের কাছে, একটি আন ডেমোক্রেটিক দেশের কাছে। এইটা আমেরিকান লিবারেলদের জন্য হজম করা মুশকিল।
আমেরিকা পথে বসবে না, কিন্তু মন্দা, বেকারত্ব, গণঅসন্তোষ অ্যামেরিকান সমাজকে ক্রমাগত গ্রাস করবে। এসব সামলাতে রাষ্ট্র হয়ে উঠবে ফ্যাসিস্ট আর নিপীড়ক। অ্যামেরিকান পুঁজি এশিয়াতে এসে ভিড় করবে। অতীতের দম্ভ আর বর্তমানের অক্ষমতা থেকে আমেরিকার মানুষ মুক্তি চাইবে।
ট্রাম্প নেবে নানা ফ্যাসিস্ট পদক্ষেপ। এতে কিছুদিনের জন্য মুক্তি মিললেও যন্ত্রণা আরও বহুগুনে চেপে বসবে। যারা ভাবছেন ট্রাম্প ভালো হয়ে গেছে, বিজয় ভাষণে ম্যালা ভালো কথা বলেছে, হম্বিতম্বি করেনি। মাই ফ্রেন্ডস, ট্রাম্প আমেরিকার এক হিস্টোরিক নেসেসিটি। আমেরিকার এই সময়ে ট্রাম্পের মতো ফ্যাসিস্ট নেতা দরকার ছিল। ভুলে যাবেন না, ক্যাপিটালিজমের সংকটের সময় ফ্যাসিবাদের উদ্ভব হয়। আমেরিকা সেই সংকটের চূড়ায় অবস্থান করছে।
সবকিছু নিয়ে জরিপ-টরিপ চলে না
শরিফুজ্জামান শরিফ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
জরিপ: কয়েকদিন আগে দেশের একটা বেসরকারি সংস্থা জরিপ করে বলল, ‘ঢাকায় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের ৭৫ ভাগ পর্নো ছবি দেখে। ১৮ তে পা রাখা দেশের প্রধান দৈনিকটি নিউজটাকে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় ধরে তাদের পোর্টালের টপে রাখল বা টপে থাকল। নিউজটির ভিতরে গিয়ে দেখলাম, তারা ৫০০ জন শিশুর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। তার পরে ভিত্তি করে এই তথ্য জানিয়ে দিয়েছে।
ঢাকার স্কুলগুলোতে কত শিশু পড়ে? তার ভিতরে তাদের দাবি মতে, ৫০০ জনের মতামত নিয়ে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে তারা সিদ্ধান্তের দিকে চলে গেলেন। আমাদের যাদের সন্তান স্কুলে পড়ে তারা একটু নিজ নিজ সন্তানের জীবনযাত্রা পর্যালোচনা করলে অনুমান করতে পারব, এ ধরনের কাজে তাদের যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে কিনা?
যদি আমি জরিপটাকে বিশ্বাস করি, তাহলে আমার সন্তানের সঙ্গে যে বাচ্চাটি একসঙ্গে স্কুলে যায়, খেলা করে, গান গায়, ছবি আঁকে তার সম্পর্কে বা সেই সন্তানটির অভিভাবকের মনে আমার বাচ্চার সম্পর্কে একটা অবিশ্বাসের উপাদান ছড়িয়ে দেওয়া হলো পরস্পরের মনে। যেহেতু আমি জানি না, ৭৫ ভাগের মধ্যে কে কে আছে। জরিপের জন্য এমন টার্গেট পিপল বেছে নেওয়া হলো যাদের প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের শিশুদের উপর ঢালাওভাবে নিপীড়ন করা হলো…।
আমার বাচ্চাটাকে তার যে বন্ধুটার সঙ্গে আমি নিশ্চিন্তে মিশতে দিই, ওই জরিপ সেখানে অবিশ্বাসের বীজ বুনে দিল। অথচ আমরা কথা বললাম না। এই ধরনের জরিপ যদি পুলিশ, আইনজীবী, রাজনীতিক, সাংবাদিক বা অন্য যেকোনো পেশার মানুষকে নিয়ে করে এমন তথ্য হাজির করা হতো, তার প্রতিক্রিয়া কেমন হতো অনুমান করুন।
জরিপ নিয়ে কথা হচ্ছে, হবে। সময় যত যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে, এই জরিপ সমাজে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে, কাউকে আশাবাদী করছে আবার একটু পরেই সেই আশা ভেঙে দিচ্ছে। সবকিছু নিয়ে জরিপ-টরিপ চলে না।