যুক্তরাষ্ট্রে বিভক্তির রাজনীতি ও হিলারির পরাজয়
সৈয়দ রশিদ আলম
সব জল্পনা কল্পনাকে, জরিপকে মিথ্যা প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলেন। ২৪০ বছরের ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছেন একজন অরাজনৈতিক বা রাজনীতির সঙ্গে না থেকেও একটি দলের মনোনয়ন পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। ইলেকট্রোরাল ভোট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। সেখানেও ডোনাল্ড ট্রাম্প সাফল্য পেয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাফল্যের পিছনে নানা ধরনের বক্তব্য আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রচার ও প্রকাশ মাধ্যমের জরিপকে কীভাবে তিনি মিথ্যা প্রমাণ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন? যেখানে রয়টার্সের মতো গণমাধ্যম জানিয়েছিল, হিলারির জয়ের সম্ভাবনা ৯০%। তাহলে কেন হিলারি পরাজিত হলেন। তিনি কি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উপযুক্ত বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেননি? যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি অংশ যারা নিজেদের দেশে কর্মের অভাবে ভুগছেন, আরেকটি শ্রেণি উচ্চবিত্ত। ধনি ও দরিদ্রের পার্থক্য যুক্তরাষ্ট্রে চোখে পড়ার মতো।
যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ বিশ্বাস করেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে নতুন করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, অবৈধ অভিভাসীদের বের করে দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন একজন ব্যক্তির হাতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা থাকা দরকার যিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সশস্ত্র বাহিনী ও পরমাণু অস্ত্রের যথার্থ নিরাপত্তা ও প্রয়োগ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের একটি বড় অংশ মনে করেছেন, একজন নারী দ্বারা সম্ভবত এই কাজগুলো সম্ভব নয়। তাই তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বেছে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে ডেমোক্র্যাট আরেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স এর সমর্থকরা সম্ভবত ক্ষোভের কারণে হিলারিকে ভোট দেননি। অথবা ভোটকেন্দ্রে যাননি। অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা প্রায় প্রত্যেকেই ভোট দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা, অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মূল মালিকরা ইহুদি। তাদের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, তিনি যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন, তাহলে ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে নিয়ে আসবেন। তা তিনি করবেন কিনা পরের ব্যাপার, কিন্তু ইহুদিবাদী শক্তিগুলো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিজয়ী হওয়ার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তাই-ই করেছেন।
অতি নীরবে ও গোপনে তারা ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেছেন এবং সফল হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিভক্তির রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার ১০ নভেম্বর ২০১৬ সংখ্যায় প্রথম পাতায় ‘যুক্তরাষ্ট্রে দাঙ্গা’ শিরোনামে সংবাদ ছাপা হয়েছে। নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম দাঙ্গা হলো। তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্রে বিভক্তির রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে? অবক্ষয়ের রাজনীতি কি শুরু হয়ে গেল? এই লেখা আমরা যখন শেষ করছি, তখন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নগরীতে হিলারি সমর্থকরা বিক্ষোভ করছেন, কোথাও কোথাও জাতীয় পতাকায় আগুন দিচ্ছেন। আমেরিকান জনগণ এ ধরনের বিক্ষোভ দেখতে অভ্যস্ত নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে বড় অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার জনগণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আলাদা হওয়ার কথা বলছেন। মিখাইল গর্ভাচোভ যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারণে যুক্তরাষ্ট্র কি সেই পথে এগাচ্ছে? ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ঘৃণা ও হিংসার রাজনীতি যুক্তরাষ্ট্রে শুরু করে দিলেন এর ফলাফল কখনোই ভালো হবে না বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান