ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে
রুহিন হোসেন প্রিন্স
সাঁওতালদের উচ্ছেদ ও তাদের বসতবাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছেÑ এটা একটি বর্বরোচিত ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা দেশটা স্বাধীন করেছিলাম, লক্ষ্য ছিল, প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা আমরা নিশ্চিত করব। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বিজয়ের এতগুলো বছর পরে এসেও আমাদের ধর্মীয় এবং জাতীয় সংখ্যালঘুদেরকে দেশের নাগরিকের মর্যাদা দিতে পারিনি আমরা। বরং তারা নিপীড়ন, নির্যাতন, বর্বরতার শিকার হচ্ছে। তাদের নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ করতে না পারার এই ব্যর্থতা তাদের উপরই বর্তায় বিভিন্ন সময় যারা ক্ষমতায় ছিল। আমরা মনে করি, সমাজে যতক্ষণ না পর্যন্ত ধর্মীয়, জাতীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান করতে পারব, ততক্ষণ আমরা সে সমাজকে সভ্য সমাজ বলতে পারি না। সুতরাং আমাদের এখন প্রধান লড়াইটা হচ্ছেÑ সমাজকে সভ্য করে তোলা, দেশকে সভ্য করে গড়ে তোলা, সকলের মর্যাদা নিশ্চিত করা। তারা যাতে বাংলাদেশের নাগরিকের মর্যাদা নিয়ে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারে, টিকে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। তার জন্য আমাদের একটা জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। একইসঙ্গে যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, নেপথ্যে নায়কদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রথমে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাদেরকে আমরা নাগরিকত্ব দিব কিনা। বাংলাদেশে ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘু যারাই থাকুক, সবাই নাগরিকের মর্যাদা পাবে এটা নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত হওয়ার পর এদের উপর যারা নিপীড়ন, নির্যাতন করে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সংখ্যালঘুদের মর্যাদা দেওয়ার জন্য সমাজে জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ রকম অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটার কারণ হচ্ছে, তারা সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণি। অনেকে মনে করে, তাদের সরিয়ে দিতে পারলে ওই জায়গা-জমি দখল করে নিতে পারব। আধিপত্য বিস্তারটাই একটা প্রধান কাজ হিসেবে মনে হয়। সুতরাং এই আধিপত্যটা ভাঙতে হবে। এখন আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখছি, সমাজে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার জন্য, দলীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য এ ধরনের আধিপত্য বিস্তার করা হয়। নির্বাচনে ভোটের সময় দেখি তাদের ভোটার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্ষমতার বাইরের কেউ কেউ মনে করেন, এই মানুষগুলো একটা বিশেষ দলকে ভোট দেয়, এদেরকে উচ্ছেদ করতে পারলেই তাদের ভোটব্যাংক ভেঙে দেওয়া যাবে! সংখ্যালঘুদের ভোটের স্বার্থে, জমি দখলের স্বার্থে ব্যবহার না করে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার চিন্তা করতে হবে। এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সুতরাং আমি মনে করি, এ ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা অগ্রসর হবো, ততক্ষণ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না।
পরিচিতি: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সিপিবি
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ/সম্পাদনা: আশিক রহমান