৪-৫ মাসের মধ্যে স্থানান্তর শর্তের বেড়াজালমুক্ত হচ্ছে কারওয়ান বাজার স্থানান্তর প্রক্রিয়া
ফারুক আলম: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মালিকানাধীন প্রায় ২৪ বিঘা জমিতে কারওয়ান বাজার কাঁচাবাজার ও ৩টি পাকা মার্কেট নির্মিত। কাঁচাবাজার ও মার্কেটের দোকানগুলো আমিনবাজার, যাত্রাবাড়ী ও মহাখালীতে স্থানান্তরের জন্য দীর্ঘদিন ধরে মার্কেট সমিতির নেতাদের সঙ্গে ডিএনসিসির আলাপ-আলোচনা চলছে।
আলোচনায় ব্যবসায়ীরা কিছু শর্ত দেয়ায় কারওয়ান বাজার স্থানান্তরে দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীদের এসব শর্ত পূরণের আশ্বাস দেন করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। শর্ত পূরণে আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ী বাজারে নতুন করে কিছু কাজ হাতে নেয় ডিএনসিসি। আড়তের দ্বিমুখী রাস্তা তৈরি ও দোকানের অবকাঠামো ভেঙে কিছু কাজ শুরু করে ডিএনসিসি। কিছু দিনের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ব্যবসায়ীদের শর্তের বেড়াজালে দীর্ঘদিন কারওয়ান বাজার স্থানান্তর আটকে থাকলেও আগামী ৪ থেকে ৫ মাসের মধ্যে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে মেয়র আনিসুল হক আশা প্রকাশ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি চাইলেই কারওয়ান বাজার স্থানান্তর করতে পারব না। কারণ এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি বোর্ড তৈরি হয়েছে। বোর্ডের পরিকল্পনা অনুযায়ী আমিনবাজার, যাত্রাবাড়ীতে নির্মাণ কাজও চলছে।
তিনি বলেন, আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীতে আগেই মার্কেট-আড়ৎ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এরপরেও ব্যবসায়ীরা কিছু শর্ত দিয়েছেন। সেই শর্তে মাত্র ১০ ভাগ কাজ বাকি ছিল। কাজগুলো শেষ পর্যায়ে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ব্যবসায়ীরা কারওয়ান বাজার ছেড়ে অন্য জায়গায় স্থানান্তর হতে রাজি, এটিই পজেটিভ। আনিসুল হক বলেন, কারওয়ান বাজার সরানো নিয়ে সিটি করপোরেশন ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে নিয়মিত মিটিং করছি। মনে হচ্ছে উইন উইন সিচ্যুয়েশনে এ সমস্যার সমাধান হবে।
কারওয়ান বাজার ২নং মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ শামসুল আলম বুলবুল বলেন, সিটি করপোরেশনতো আড়ৎ জমজমাট করবে না। আড়ৎ জমজমাট করে ব্যবসায়ীরা। সিটি করপোরেশনের কাজ মার্কেট তৈরি করে বরাদ্দ দেয়া। সেদিক থেকে যাত্রাবাড়ীতে কাঁচাবাজারের আড়ৎ জমজমাট হলেও গাবতলীর আড়ৎ জমাতে অনেক সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের কাছে সুপার মার্কেট ব্যবসায়ীদের অনুরোধ কারওয়ান বাজারের কোনো এক কোণায় বহুতল ভবন নির্মাণ করে সেখানে যেন স্থানান্তর করা হয়। কারণ এসব এলাকায় যারা থাকবেন তাদেরতো সুপার মার্কেটের পণ্য কিনতে হবে। দুটি সুপার মার্কেটকে একটি ভবনে দিলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
এ বিষয়ে মেয়র বলেন, ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কারওয়ান বাজারের যেকোনো এক কোণায় একটি মার্কেট নির্মাণ করে দিলেও প্রায় ২৩ বিঘা জমি খালি হবে। এখন যেখানে ২ হাজার ব্যবসায়ী আছে। তখন সেখানে সর্বোচ্চ দেড়শ ব্যবসায়ী থাকবেন।
কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, গত ৩ মাস আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মেয়র আনিসুল হক ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একটি মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ে সিটি করপোরেশন ও ব্যবসায়ী মহল কিছু বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা লিখিত কিছু শর্ত দিয়েছে। সিটি করপোরেশন সেই শর্ত অনুযায়ী কাজ করছে। শর্ত অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন হলে ব্যবসায়ীরা যাত্রাবাড়ী ও গাবতলীতে যাবে। এখন মার্কেটগুলোর সংস্কার কাজ চলছে। সংস্কার কাজ শেষে মার্কেট উদ্বোধনের ৬ মাস পরে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা সেখানে যাবেন।
উল্লেখ্য, ডিএনসিসির হিসাব অনুযায়ী, কারওয়ান বাজারে ১৭৬টি আড়ৎ ও ১ হাজার ৬১৩টি খুচরা ব্যবসার দোকান আছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ‘ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প’ পাস করে ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর। কৃষিপণ্যের বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি কারওয়ান বাজারের যানজট কমাতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। মহাখালী, আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীতে এই তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। তিন দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুনে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও তা সম্পন্ন হয়নি। সম্পাদনা : মাহমুদুল আলম