বিএনপিকে পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর সুযোগ দিবে না সরকার
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিএনপি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে পছন্দ অনুযায়ী স্থানে সমাবেশ করতে অনমুতি না পাওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকেছে। বিএনপি এটাকে প্রতিবাদ হিসাবে মনে করলে সরকার এটাকে ওই ভাবে বিবেচনা করছে না। সরকারের কাছে ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে খবর রয়েছে, বিএনপিকে খোলা চত্ব¡রে সমাবেশ করতে দিলে সেখানে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তারা যে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। সরকারের উপরও দোষ চাপানোর চেষ্টা হতে পারে। আর এটাকে উপলক্ষ করে তারা আন্দোলনের ইস্যুও তৈরি করতে পারে। কিন্তু সরকার সেই সুযোগ দিবে না। বিএনপিকে সমাবেশ করতে হলে সরকারের শর্ত মেনেই হল রুমে অনুষ্ঠান করতে হবে। সেটা না করলে আপাতত উন্মুক্ত স্থানে তারা অনুষ্ঠান ও সমাবেশ করতে পারবে না। নিরাপত্তাজনিত বিষয় বিবেচনা করেই সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নিয়েছে।
বিএনপির নেতা ও কর্মীদেরকে সোমবারে মিছিল ও বিক্ষোভ ঢাকা শহরের সকল থানায়, দেশের সকল মহানগর ও জেলা সদরে করার জন্য বলা হয়েছে। সোমবার তা পালন করার জন্য নেতা ও কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বিএনপিকে সমাবেশ করার জন্য পুলিশের তরফ থেকে একটি হলরুমে অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো। কারণ এর আগে তারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠান করেছে। এবারও তারা করতে পারে। কিন্তু তারা সেখানে অনুষ্ঠান করার অনুমতি পাওয়ার পরও করেনি। এখন তারা আবার এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে। এই অবস্থায় সমস্যা বাড়ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা শান্তিপ্রিয় দল। আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবো। কিন্তু আমরা নিয়ম অনুযায়ী সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চেয়েছি। কিন্তু অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই কারণে এর প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। অতীতে সব সময় আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই সমাবেশ করেছি। কিন্তু এই সরকার জনসভার অনুমতি দিচ্ছে না। অনেক দিন ধরেই আমরা বিভিন্নস্থানে সমাবেশ করার চেষ্টা করছি। আগেতো অনুমতি দেওয়া হতো না। মাঝে কাউন্সিলের জন্য স্বল্প পরিসরে দিয়েছে। আমরা যেভাবে চাই সেইভাবে দেওয়া হয় না। সব সময় তারা তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয় ও শর্তজুড়ে দেয়। আমরা যেখানে চাইনি সেখানেও আবার অনুমতি দেয়। কিন্তু আমাদেরতো সমাবেশ করার জন্য পরিকল্পনা রয়েছে। তা কেমন করে করবো সেটারও একটা পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা বড় একটি সেই দল জনসভার অনুমতি দেওয়া হয় না। আর সরকার যখন আমাদের অনুমতি দেয় না। তখন বোঝা যায় দেশে গণতন্ত্রের অবস্থা কোন জায়গায় এসে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি বলে কেবল কথা নয় যে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমাবেশ করার অনুমতি দিতে হবে। কেননা জনসভা করা রাজনৈতিক দলের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বঞ্চিত করা হচ্ছে। সরকার আসলে ভয় পাচ্ছে। মনে করছে আমাদের পাশে জনগণ আছে তারা ঐক্যবদ্ধ হলে সরকারের জন্য সমস্যা হবে। আর নিরাপত্তাহীনতার যে অজুহাত দেওয়া হয় এটা কোনো কারণ হতে পারে না। কারণ আমাদের এখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের ও পুলিশের।
সরকারের নীতি নির্ধারক একজন মন্ত্রী বলেন, বিএনপি কোনো কিছু করতে পারছে না। জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা প্রত্যাখ্যান করার কারণে এখন জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে। সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ায় সরকারের আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ করছে। আসলে এটা তাদের একটি অজুহাত। সত্যিকার অর্থে তারা কর্মসূচি পালন করতে চাইলে যেখানে অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেখানেই করতো। তা না করে এখন তারা পরিস্থিতি ঘোলা করতে চায়। তারা খোলা জায়গায় অনুষ্ঠান করার কারণে কোনো ঘটনা ঘটলে ও পরিস্থিতির অবনতি হলে এই দায়িত্ব কেন নিবে? সরকারের ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব দেশের পরিস্থিতি শান্ত ও শান্তিপূর্ণ রাখা। সেটা করতে হবে। সেই হিসাবে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে ও নিচ্ছে।
উল্লেখ্য, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপি ৭ নভেম্বর কিংবা ৮ নভেম্বর পেসাহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চায়। পুলিশ সেখানে অনুমতি দেয়নি। তা না পেয়ে ৮ নভেম্বর নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চায়। কিন্তু তাও দেয়নি পুলিশ। তারা বিএনপির চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেনি। এই অবস্থায় বিএনপি ১৩ নভেম্বর সমাবেশ করার কথা ঘোষণা করে। পুলিশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সভার অনুমতি দেয়। কিন্তু বিএনপি তা করেনি। করবে না বলেও জানিয়ে দেয়।