রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল
মাহমুদুল আলম: সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা একটি রিট আবেদন খারিজের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। রিটকারী আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী গতকাল গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আইনজীবী বলেন, ‘রায়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের স্বাক্ষরের পর গত ৬ নভেম্বর তা প্রকাশ করা হয়। আমরা হাইকোর্টের এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছি।’
রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, সংসদ দেশের বাস্তবতার নিরিখে সংবিধান সংশোধন করতে পারে। দেশের বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার পরিধি বাড়ানোর আইনগত ও সাংবিধানিক এখতিয়ার সংসদের। সংসদ সেটাই করেছে।’
প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রধর্মের ধারণা আমাদের আদি সংবিধানে ছিল না। ১৯৮৮ সালে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ২(ক) অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়। সেখানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়। এই সংশোধনীতে বলা হয় ‘২(ক)। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’
২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ২(ক) অনুচ্ছেদকে আরও পরিমার্জন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘২(ক)। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবে।’ এ দ্বারা স্বীকৃত যে, ২(ক) অনুচ্ছেদে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হলেও অন্যান্য ধর্মকেও সমমর্যাদা ও সমঅধিকার দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা ২(ক) অনুচ্ছেদ বাতিলের আবেদন গ্রহণ করতে পারছি না। বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ দেখার অধিকার জাতীয় সংসদের। জাতীয় সংসদ সেটাই করেছে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রাষ্ট্রধর্মের বৈধতা নিয়ে করা রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেয়।
১৯৮৮ সালে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয় এবং ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা হয়। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী এ রিট আবেদন করেন। রিটে পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল জারির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন চতুর্থ জাতীয় সংসদে অষ্টম সংশোধনী অনুমোদন হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর সঙ্গে ২ (ক) দফা যুক্ত হয়। এতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’
২০১১ সালের ২৫ জুন আনা পঞ্চদশ সংশোধনীতে ওই অনুচ্ছেদ আবারও সংশোধন করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবে।’ রিট আবেদনকারীর যুক্তি ছিল, একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
প্রসঙ্গত, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্তির বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অপর একটি রিটও গত ২৮ মার্চ খারিজ করে দেয় হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ। তবে ওই রায়টির পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনো প্রকাশ হয়নি। ২৮ বছর আগে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক হাইকোর্টে ওই রিট আবেদনটি করেছিলেন। সম্পাদনা: আনোয়ার