ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মন্তব্য প্রতিরক্ষা খাতে আরও বেশি খরচ করতে হবে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবশ্যই প্রতিরক্ষা খাতে আরও বেশি খরচ করতে হবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে সকলকে ঐকমত্য ধরে রাখতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর এমন মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় নানা ইস্যুতেই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে। নির্বাচনি প্রচারণার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয়ান মিত্র দেশগুলোর জন্যও মার্কিন সুরক্ষা হবে শর্তসাপেক্ষ। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন তিনি। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি খর্ব করার চুক্তিরও সমালোচনা করেছেন তিনি। গত মঙ্গলবারের নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ায় তাই এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি। ইইউয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এসব বিষয়ে নিজেদের ঐকমত্য ধরে রাখার কথা বলছেন। ইইউয়ের বর্তমান সভাপতি দেশ সেøাভাকিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিরোস্ক্রাভ লাজচাক বলেন, ‘আমরা এটা বুঝতে পারছি যে আমেরিকার পক্ষ থেকে অনেক বেশি ব্যবসায়িক মনোভাব দেখানো হবে এবং সে কারণেই আমাদের পক্ষ থেকে আরও বেশি ইউরোপীয় মনোভাব তুলে ধরা উচিত। কিন্তু কেউ কখনোই এই নির্বাচনের ফলাফল বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের কাজ করার আগ্রহের কথা জানতে চাননি।’ রোববার ইইউ দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকের পর তিনি তার এই অবস্থানের কথা জানান। ইইউয়ের শীর্ষ কূটনীতিক, পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিনিধি ফেদেরিকা মোঘেরিনিও বলেন, ইইউ জোটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা সোমবার নিজেদের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সক্ষমতা জোরদার করা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। তিনি বলেন, ‘এটা ভবিষ্যতের জন্য আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে।’ তবে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এমন অবস্থানের সঙ্গে দ্বিমত রয়েছে বৃটেন ও হাঙ্গেরীর। এই দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাই রোববারের ওই বৈঠকে অংশ নেননি। উপস্থিত ছিলেন না ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। আবার পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইটোল্ড ওয়াজচিকোভস্কি বলেন, ‘ইউরোপের একাধিক সমস্যা রয়েছে। আমেরিকা এসব সমস্যার একটি নয়। আমেরিকানরা এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে যিনি দেবদূত নন। তাই বলে তিনি এমন শিশুও নন যার সঙ্গে বিশেষভাবে আচরণ করতে হবে।’ গত জুন মাসে ইইউ ছেড়ে যাওয়ার পক্ষে গণভোট দেয় ব্রিটিশরা। জোটের পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলোর মধ্যে হাঙ্গেরী ও পোল্যান্ডের মতো দেশ ইইউয়ের কঠোর সমালোচনা করে আসছে অভিবাসন নীতির কারণে। তাদের ভাষ্য, ইইউয়ের নীতির কারণেই ইউরোপের দেশগুলোকে এত বিপুল পরিমাণ শরণার্থী ও অভিবাসীকে গ্রহণ করতে হয়েছে। ব্রাসেলসে ক্ষমতার কেন্দ্রিভূতকরণের বিপক্ষেও তাদের অবস্থান। ওয়াজচিকোভস্কি বলেন, ‘এগুলো বড় সমস্যা যেগুলো নিয়ে এখন আমাদের কাজ করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে ইউরোপ যে বিশেষ বিবেচনা দেখাচ্ছে তা বাড়াবাড়ি।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোরদারে সহায়তার বিষয়টি কখনোই সহজ ছিল না। তবে ট্রাম্পের জয়ের পর এই ইস্যু গতি পাবে বলে আশা করছে জার্মানি ও ফ্রান্স। বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিদিয়ের রেইনডারস বলেন, ‘ বিশ্বে ইউরোপের কণ্ঠস্বর কীভাবে জোরদার করা যায়, আমার মনে হয় সেটা নিয়েই এখন বিতর্ক চলছে। আমরা এরই মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নিয়ে কথা বলেছি। বাণিজ্য, অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য হতে পারে।’ সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ