আর কত নূর হোসেন চান আপনারা?
রবিউল আলম
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ বুকে লিখে আত্মহুতি দিয়েছিলেন নূর হোসেন। গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছিল। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলাম নূর হোসেনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে। শেখ হাসিনা-ও বেগম খালেদা জিয়া এক কাতারে বসেছিলেন তখন। আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম এই ভেবে যে, দেশে আর হরতাল-অবরোধ হবে না। গণতন্ত্রের জন্য নূর হোসেনদের আর আত্মহুতি দিতে হবে না। কিন্তু চাওয়ার সঙ্গে পাওয়ার কি মিল আছে? ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি মতায় এসে গণতন্ত্রের কোন ধারাটি অত রেখেছিল? নূর হোসেনের আত্মত্যাগের গণতন্ত্র গ্রাস করে, জনগণের অধিকার হরণ করে ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচন করল বিএনপি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে হলো, জীবন দিতে হলো অনেকের।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মতায় আসে। পাঁচবছর দেশ পরিচালনা করেন শেখ হাসিনা। কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম ছাড়া ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে মতা হস্তান্তর করলেন। ২০০১ সালে বিএনপি মতায় এলে শুরু হয় আওয়ামী লীগ নিধন কর্মসূচি, আবারও নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করতে হলো। পরবর্তীতে ওয়ান-ইলেভেন এলো, বন্দি হলেন দুই নেত্রী, শুরু হলো মুক্তির আন্দোলন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। এর মধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসন লাভ করে।
বিএনপি-জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন পরিত্যাগ করে শুরু করলেন জ্বালাও-পোড়াও, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে জনগণের উপর প্রতিশোধ নিল। ১০ নভেম্বর ২০১৬, নূর হোসেন দিবসে খালেদা জিয়া সর্বোচ্চ ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। কাকে এই আহ্বান জানিয়েছেন বেগম জিয়া? আপনার জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছে, তাদের মূল্যায়ন কীভাবে করেছেন? আপনার নিজ ছেলে জনগণের অর্থ লুট করে আত্মগোপনে আছেন, নূর হোসেনের আত্মত্যাগের মূল্যায়ন আপনার সরকার কি করেছে, কীভাবে মূল্যায়ন করেছেÑ এর একটি উদাহরণ জাতির সম্মুখে তুলে ধরুন, প্লিজ।
আপনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আপনারই দলের হাজারও নেতাকর্মী আজ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে সন্ত্রাসী হয়েছে, মানুষের ঘর-বাড়ি, গরু-বাছুর, শিাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়েছে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে ও গণপিটুনিতে জীবন দিয়েছে, অসহায় পিতা-মাতা সন্তান হারা হয়ে পাগল হয়ে আছে। আপনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সন্তান সন্ত্রাসী হওয়ার অপরাধে বাবা-মা আজ সমাজে অপমানিত হচ্ছে। একদিকে সন্তান হারানোর বেদনা, অন্যদিকে অভাব-অনটন, অপমান-অপদস্ত আর কত সইতে হবে একজন অসহায় পিতা-মাতাকে আপনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে? আপনার সন্তান, নাতি-নাতনী থাকবে নিরাপদে আর অন্যের সন্তানকে আহ্বান জানাবেন সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য, আর মতায় গিয়ে ভুলে যাবেন নূর হোসেনদের ত্যাগের কথা। আর দেশ ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা করবেন? এদেশের জনগণের কাছ থেকে ভোট নিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে মতা ভাগ করবেন, তা কী করে হয়? লাখো মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের সুবিধা ভোগ করবেন, বিদেশিদের স্বার্থ রা করবেন, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করবেন তা কি করে হয়?
বিদ্যুৎ উন্নয়ন, সুন্দরবনের চ্যানেল, চিটাগাং এর ট্যানেল, চার লেন রাস্তা, মেট্রোরেল প্রভৃতি কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে উন্নতির শিখরে আরোহন করছে বলে আপনি আন্দোলন করবেন প্রতিবন্ধকতার জন্য, সর্বোচ্চ ত্যাগের আহ্বান করছেন কি এ জন্যই? পরিষ্কার করবেন, প্লিজ। জানি না আপনার মনে কি আছে, তবে শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০১৯ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য যদি সর্বোচ্চ ত্যাগের আহ্বান জানিয়ে নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত হতে বলেন, সেটা কাজে লাগবে, দেশের মানুষও বেছে নিতে পারবে ভালো-মন্দ।
জীবন দানের সর্বোচ্চ ত্যাগের আহ্বান পরিত্যাগ করুন। আর কত নূর হোসেন চান আপনারা? দেশের সমস্যা, সম্ভাবনা নিয়ে রাজনীতি করুন, কিন্তু আমাদের জীবন নিয়ে খেলবেন না। আর কোনো নূর হোসেনকে চাইবেন না, প্লিজ।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান