৬৫ বছরে দুই লাখ বেওয়ারিশ লাশ দাফন
ইসমাঈল হুসাইন ইমু ও মবিনুর রহমান: রাজধানীর আজিমপুর, মিরপুর, উত্তরা ও জুরাইন কবরস্থানে গত ৬৫ বছরে প্রায় দুই লাখ বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয়েছে। আর এসব বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম।
রাজধানীর ঢামেক হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গ, আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম আজিমপুর ও জুরাইনসহ বিভিন্ন কবরস্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। চলতি বছরের গত জুলাই থেকে চার মাসে মোট ৪৫৭ জন ব্যক্তির লাশ দাফন করেছে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে ১০৯ জন, আগস্ট মাসে ১১১ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১১৫ জন ও অক্টোবর মাসে ১২২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়েছে। এতে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় শতাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০০৯ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৮ হাজার ৭২৫টি অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়েছে। আর ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে মোট বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৪ টি। এই হিসাবে প্রতিদিন ৫ দশমিক ৬৯ টি লাশ দাফন করা হয়েছে। আর ২০০৬-৭ অর্থ বছরে বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয়েছে ১ হাজার ৭৯৮টি। এতে প্রায় প্রতি দিন ৫ দশমিক ৯৮টি লাশ দাফন করা হয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ১ হাজার ২৩৬ বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয়েছে।
মর্গ সূত্রে জানা গেছে,আজিমপুর কবরস্থান, পোস্তগোলা, জুরাইন কবরস্থানে ২০০১-২ অর্থ বছরে ৩ হাজার ৯৩ জন, ২০০২-৩ অর্থ বছরে ৩ হাজার ১২৩ ব্যক্তির লাশ সমাহিত করা হয়েছে। এছাড়া ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে ১ হাজার ৬১৯ ও ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে ১ হাজার ৬৫৬ লাশ দাফন করেন। আর ২০০৫-৬ অর্থ বছরে ১ হাজার ৯৭৪ লাশ দাফন করা হয়েছে। এতে গত চার অর্থ বছরে ৯ হাজার বেওয়ারিশ লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
ঢামেক মর্গের ২টি ফ্রিজ নষ্ট
হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও মর্গে মোট ৬টি ফ্রিজ বা মরচ্যুয়ারি রয়েছে। তার মধ্যে মর্গের ২টি ফ্রিজ নষ্ট রয়েছে। আর এই ৬টি ফ্রিজে মোট ২৮টি লাশ রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। আর ওই মারচ্যুয়ারিগুলোর মধ্যে অধিকাংশই বছরে কয়েক মাস নষ্ট থাকে। ফলে বেওয়ারিশ লাশ বেশি দিন না রাখার কারণে তাদের পরিচয় উদ্ধার বা হত্যার রহস্য উদঘাটন করা যায় না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে মুরচ্যুয়ারি গুলো ভাল থাকলে আরও ৭-৮ দিন পর্যন্ত লাশ রাখা সম্ভব হতো। প্রতিটি লাশ যদি ৭/৮ দিন রাখা যায় তাহলে অধিকাংশ লাশের পরিচয় উদ্ধার করতে পারবে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম সূত্র জানায়, ১৯০৫ সাল থেকে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কাজ করে আসছে। একমাত্র স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবেই বেওয়ারিশ লাশ দাফনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম তাদের রয়েছে। তার মধ্যে বেওয়ারিশ লাশ দাফনের কাজটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ২০০৪ সালের আগস্ট মাস থেকে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম বেওয়ারিশ লাশের দাফন সেবা প্রকল্প চালু করেছে। রাজধানীতে বেওয়ারিশ লাশের গোসল, কাফন শরিয়ত মোতাবেক করে থাকে। তাদের নিজস্ব কোনো কবরস্থান নেই।
আজিমপুর কবরস্থানের সিনিয়র মাহরার মাওলানা মিজানুর রহমান জানান, আগে এখানে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের লাশ দাফন করা হতো। আর এতো লাশ আনা হতো যে জায়গা হতো না। আর এখানে জায়গাও কম। তাই গত ৬-৭ মাস আগে থেকে এখানে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের লাশ দাফন করা হয় না। এখন জুরাইন কবরস্থানে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের লাশ দাফন করা হয় বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের এডিসি ইউসুফ আলী জানান, কোথাও কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হলে প্রথমে পুলিশ গিয়ে হাসপাতালে নেয়। আর নিহত হলে মর্গে পাঠানো হয়। এরপর ওই ব্যক্তির পরিচয় উদ্ধারের জন্য তার ছবি তোলা, ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হয়। আর বর্তমান প্রযুক্তির কারণে প্রয়োজন মনে হলে ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর ওই ছবিসহ দেশের থানাগুলোতে সংবাদ পাঠানো হয়। ওই ছবিসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, ডিএমপির অনলাইন পত্রিকা এবং সিআইডি পুলিশের প্রকাশিত ত্রৈমাসিক পত্রিকায়ও নিহত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এতে অনেক বেওয়ারিশ লাশের ছবি দেখে অনেকের পরিচয় সনাক্ত হয়ে থাকে বলে জানান তিনি। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু