নাসিরনগরে হামলা : জাতির কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী
মোহাম্মদ নূরুজ্জামান চৌধুরী
বেশ কদিন ধরে ভীষণ কষ্টের মধ্যে আছি আমি। আসলে আমরা নাসিরনগরের লোকজন হিন্দু-মুসলিম সবাই
মিলে খুবই ভালো
ছিলাম। আমাদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক সৌহার্দ্য ছিল ঈর্ষণীয়, চোখে পড়ার মতো। কিন্তু, হঠাৎ এমন এক ঘটনা ঘটল যা আমাদের নাসিরনগরের সবাইকেই দাঁড় করিয়েছে কাঠগড়ায়, সবাইকে করেছে অপরাধী। আসলেই আমরা দেশবাসীর কাছে অপরাধী, তাই জাতির কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।
আমার মনে হয়, ওইদিন প্রশাসনের আয়োজন যথাযথ হলে, এই দুর্নামের ভাগিদার আমাদের হতে হতো না বা স্থানীয় আওয়ামী লীগ সক্রিয় হলেও ঠেকানো যেত এই অপতৎপরতা। অনেকেই ঠেকিয়েছে কিন্তু দলীয় লোকজনের প্রতিরোধ ছিল না। এইসব ঘটনাকে ছাপিয়ে মন্ত্রী ছায়েদুল হকের ভূমিকা নিয়েই এখন মূল আলোচনা। অনেকেই অনেকভাবে তাকে নাজেহাল করছেন তাকে। আসলে উনি এসবের শিকার…। ছায়েদ ভাই অনেক অসুস্থ ছিলেন, তাই বাড়ি যেতে দেরি হয়েছে। আর ‘মালাউন’ বলা, বা এই, সেই বলা… তা সবই উনার বিরুদ্ধে মিথ্যা-সাজানো অপবাদ।
ঢাকায় কলেজে পড়াশোনা, সেই থেকেই ছায়েদ ভাইয়ের বাসায় যাওয়া আসা। ১৯৯৪ সাল থেকে শুরু। আগে বেশি যাওয়া হতো, এখন মন্ত্রী হওয়ার পর একটু কম যাওয়া হয়। স্কুলজীবন থেকেই জাতীয় দিবসগুলো, ১৫ আগস্ট… অত্যন্ত আন্তরিকতার সহিত আগ্রহ নিয়ে পালন করতাম, ফলে রাজনীতিকে কখনোই অপছন্দ করতাম না। যা বলছিলামÑ ছায়েদ ভাইয়ের ব্যাপারে… খুব কাছ থেকে তাকে দেখেছি… আর মুগ্ধ হয়েছি মানুষটির সততায়, নির্লোভতায়। মনের ভিতর লালন করার চেষ্টা করেছি উনার নীতি ও আদর্শ। অনেক অনেক ঘটনা দেখেছি কাছ থেকে। দেখেছি সততার প্রশ্নে উনার দৃঢ়তা, আপোসহীনতা। তেলবাজি, তোষামোদি চরিত্র কখনো দেখেনি এই মানুষটির মধ্যে। কখনোই সম্পদ অর্জন, ধন-সম্পদের মালিক হওয়া, গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়াÑ এসব আকাক্সক্ষা তার মাঝে দেখিনি। আর এসব গুণাবলির কারণেই নাসিরনগরের মানুষ বারবার উনাকে নির্বাচিত করেছে। মানুষ নিজের পকেটের টাকা খরচ করে তার নির্বাচনি প্রচারণা করে থাকে। তার নির্বাচনি খরচ ১০ লাখ টাকার কম। যেখানে বিপক্ষ শিবিরে খরচ করে ২০/৩০ কোটি টাকা। সততা, জনগণের অকুণ্ঠ ভালোবাসা, নামাজি, আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস এসবই ছায়েদ ভাইয়ের সম্বল। এখন যে বিপদ মোকাবিলা করছেন, মহান আল্লাহ উনার সহায় হবেন ইনশাআল্লাহ।
আমি কখনো দেখিনি সততার প্রশ্নে সামান্য আপোস করতে। আমরা নাসিরনগরের হিন্দু-মুসলিম উনাকে ভালোবাসি হৃদয় দিয়ে। আর এই ভালোবাসা অবশ্যই দ্বিপাক্ষিক। আমরা নাসিরনগরের মানুষ যেমন তাকে ভালোবাসি, প্রতিদানে উনি আমাদের দিয়েছেন অনেক অনেক বেশি। একসময় ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিনের মধ্যে ঢাকায় পারতাম না, এখন ঢাকায় যাচ্ছি, কাজ শেষে ফিরে যাচ্ছি
বেলা ফুড়াবার আগেই। আমাদের ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়ন সদরের সঙ্গে সড়ক পথে সংযুক্ত। এসবই বর্তমান সরকার তথা ছায়েদ ভাইয়ের উন্নয়ন। আমাদের নেত্রীও একজন সৎ, আদর্শবান ব্যক্তিকে মন্ত্রী বানিয়ে সততার কদর দিয়েছে আর আমাদের নাসিরনগরবাসীকে করেছেন ঋণী। আশা করি, নেত্রী তার বিশ্বাস অটুট রাখবেন ছায়েদ ভাইয়ের প্রতি।
লেখক: ব্যাংক কর্মকর্তা
সম্পাদনা: আশিক রহমান