দায়ীদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে
জোনায়েদ সাকি
ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত যে হামলা, সহিংসতা চলছে দেশে, হিন্দু সম্প্রদায় বা সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর উপরÑ এসবের পেছনে এক ধরনের জমি দখল, লুটপাটের উদ্দেশ্য রয়েছে। একইসঙ্গে স্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্যও এমন ঘটনা ঘটে থাকে। যার ফলে আমরা দেখছি, এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত হামলা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাতেই পরিচালিত হচ্ছে বললে কি ভুল হবে? ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও আমরা দেখলাম প্রশাসন এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা, দায়িত্বহীনতার ভূমিকা। আর গোবিন্দগঞ্জে আমরা দেখলাম, পুলিশই সেখানে সাঁওতালদের উপরে হামলা করছে এবং গু-াদের অগ্নিসংযোগে সহায়তা করছে, পাহারা দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, এখন পর্যন্ত সরকারি প্রতিনিধি দল ঘুরে এসেছেন, প্রশাসনকে মামলা নিতে অনুরোধ জানাচ্ছেন কিন্তু সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মানুষের উপর নির্যাতন কিন্তু একদম থেমে নেই। দুজন আহত সাঁওতাল জনগোষ্ঠীল মানুষ রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন, কোর্ট তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিল হাতকড়া খুলে দেওয়ার জন্য। হাতকড়া খুলে দিতে না দিতেই তাদেরকে আবার হাসপাতাল থেকে এনে জেলে ঢোকানো হয়েছে। এই যে একটা প্রচ- অবমাননা করা, তা খুবই অমানবিক আচরণ রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী করছে। সরকার কি এদের নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম? সরকারের কথা কি জেলা, উপজেলা পর্যায়ের বা থানা পর্যায়ের লোকজন শুনছে না? আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকার আমাদের এক ধরনের কথার ফুলঝুঁরি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবে ঘটনা যা ঘটার সেটা ঘটছে এবং এই ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে, রাজনৈতিক দিক থেকেও ফায়দা লুটার বিষয়টাও আমরা দেখতে পাচ্ছি।
জীবনের চেয়ে সম্মান অনেক বড় ব্যাপার, এটা দেশের বিভিন্ন জনপদের মানুষ বা বিভিন্ন জাতির মানুষÑ সেটা বাঙালি, সাঁওতাল, আদিবাসী সকলেই বিভিন্ন সময় তার প্রমাণ রেখেছে। সিধু, কানুরা লড়াই করেছেন। তাদের উত্তরসুরিরা এখনো পরীক্ষা দিয়ে চলেছেন। জীবনের চেয়ে সম্মান অনেক বড়। যেভাবে একটা জনগোষ্ঠীকে অপমান করা হচ্ছে, তাদের অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে, নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছেÑ এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের ত্রাণ দেওয়াকে একটা নাটক বলে মনে হয়েছে তাদের কাছে। ‘জুতো মেরে গরু দান’ করার মতো, তাই এ ত্রাণ গ্রহণ করেননি সাঁওতালরা, এটা আমার ধারণা। ত্রাণ ফিরিয়ে দিয়ে তারা তাদের আত্মমর্যাদার পরিচয় দিয়েছেন।
এখন যেটা জরুরিভাবে করা দরকার তা হচ্ছে যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িতÑ স্থানীয় এমপি, চিনিকলের ম্যানেজার, যারা এই জমি দখল করতে চায়, যারা এই জমির অবৈধ ফায়দা লুটে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। স্থানীয় যে প্রশাসন, মিল প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন যারা তারা সাঁওতালদের নিরাপত্তার পরিবর্তে ওই জনগোষ্ঠীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার কাজে সাহায্য করছে। আমাদের দাবি, দায়ীদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দোষীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে না পারলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার পেছনে যারা কাজ করেছে, যারা ঘটনার মূল হোতা তারা কেউ জবাবদিহিতার আওতায় আসছে না। অন্যায় যেখানেই ঘটুক, যাদের সঙ্গেই ঘটুক অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র যেন সবক্ষেত্রে, সবার ক্ষেত্রে তাই করে।
পরিচিতি: প্রধান সমন্বয়ক, গণসংহতি আন্দোলন
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ/সম্পাদনা: আশিক রহমান