দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করব না : আইভী
নিজস্ব প্রতিবেদক: পুনর্বার ভোট করতে চাইলেও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। আসন্ন নির্বাচনে তাকে বাদ রেখে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থীর নাম প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী সিটি মেয়র।
২০১১ সালে দলের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় অনেক নেতার বিরোধিতার মধ্যেও প্রার্থী হয়ে দলের আরেক নেতা এ কে এম শামীম ওসমানকে এক লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। নির্বাচন কমিশন আগামী ২২ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে তফসিল ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে তিন প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করে। আইভীকে বাদ দিয়ে ওই সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাম মেয়র পদে প্রস্তাব করে। তার বিকল্প হিসেবে বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশিদ এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের নাম প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত হয়।
গত নির্বাচনে আইভীর পক্ষে ছিলেন আনোয়ার হোসেন। কিন্তু রাজনীতির ‘খেলায়’ এখন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আইভীরবিরোধী শিবিরে তিনি।
বর্ধিত সভার সিদ্ধান্তের পেছনে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত করেন আইভী। তিনি বলেন, আসলে একটি অংশ এই কাজটি করেছে। সেটি আমরা সকলেই জানি, নারায়ণগঞ্জবাসীও জানেন। মহানগর আওয়ামী লীগ তড়িঘড়ি করে একটি মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একজন প্রভাবশালী নেতার নির্দেশে এ কাজটি হয়েছে। তবে মহানগর কমিটির এ সিদ্ধান্ত নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে কেন্দ্রের দিকেই তাকিয়ে আছেন আইভী। তিনি আরও বলেন, বহু আগে থেকেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ দুটি ভাগে বিভক্ত আছে। সেক্ষেত্রে তারা কারও নাম কেন্দ্রে পাঠাতেই পারে। কেন আমার নাম পাঠায়নি তারাই ভালো বলতে পারবে। এ ব্যাপারে আমার বলার কিছু নেই। দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমি সেই সিদ্ধান্তেই যাব। আমি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করব না। আমি ডিসাইডেড।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগে নির্দলীয় হলেও স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন হওয়ায় এখন দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। অর্থাৎ গতবার আইভী ও শামীম নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে ভোট করলেও এবার প্রার্থী হলে দলের মনোনয়ন লাগবে। আইভী দলের মনোনয়ন পেলে নৌকা প্রতীকে লড়বেন, তা না পেলে প্রার্থী হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভিন্ন প্রতীকে লড়তে হবে তাকে।
গতবার আইভীর পক্ষে তৎকালীন সংসদ সদস্য সারা বেগম কবরীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ থাকলেও কেন্দ্রের কেউ প্রচারে যাননি। অন্যদিকে শামীমের পক্ষে প্রচারে যান কেন্দ্রের সম্পাদকম-লীর বেশ কয়েকজন নেতা। ভোটে জয়ী হয়ে আইভী দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ থেকে নারায়ণগঞ্জে কাউকে সমর্থন দেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ওসমান পরিবারের সঙ্গে রাজনৈতিক টানাপড়েনের উত্তরাধিকার বহন করছেন আইভী। তার বাবা আলী আহমদ চুনকা ওসমানদের বিপক্ষ শিবিরে থেকে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে ওসমানদের অনুপস্থিতিতে প্রবাস থেকে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন চিকিৎসক আইভী। ২০০৩ সালে চেয়ারম্যান হওয়ার পর আট বছর এবং মেয়র হওয়ার পর আরও পাঁচ বছর মিলিয়ে ১৩ বছর নারায়ণগঞ্জ নগরবাসীর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
নানা সমালোচনা থাকলেও আইভীর দাবি, তার ‘ভালো’ কর্মকা-ের জন্য আওয়ামী লীগ আবারও মেয়র পদে তাকে মনোনয়ন দেবে। আইভী বলেন, আমি ১৩ বছর যাবৎ এখানে কাজ করছি। ২০০৩ সালে জোট সরকারের সময় প্রথম নির্বাচন করেছি অত্যন্ত প্রতিকূলতার মাঝে। সেটি আওয়ামী লীগের একটি বিজয়। ২০১১ সালেও আমি যে সিটি করপোরেশন নির্বাচন করেছি, যেটা দেশবাসী দেখেছে। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি দল, আমাকে মনোনয়ন দেবে। কারণ আমি আমার কর্মের মাধ্যমে প্রমাণ করেছি। আওয়ামী লীগকে পিছিয়ে দেওয়ার মতো কোনো নেতিবাচক কাজ তিনি করেননি বলেও দাবি করেন আইভী। বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে থেকেও আমি জনমতের ঊর্ধ্বে উঠে যে কাজগুলো করেছি- সেটা আমার দলের মধ্যেই প্লাস পয়েন্ট হয়েছে। আশা করি, দল মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাকে বিবেচনায় রাখবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ২২ ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে ২৪ নভেম্বরে মধ্যে আইভীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। গত নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় আইভী ও শামীম ওসমানের ভোট যুদ্ধ আওয়ামী লী-আওয়ামী লীগ লড়াইয়ে পরিণত হয়েছিল। এবার বিএনপি ভোটে অংশ নেবে কি-না, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। সম্পাদনা : কালাম আজাদ