তিনি ছিলেন তারুণ্যের প্রতিচ্ছবি
ওমর শাহ
ত্যাগ ও নিরলস পরিশ্রম তার নামটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে চিরকাল। ৭৯ বছর বয়সী বয়োবৃদ্ধ মাওলানা আব্দুল জব্বার ছিলেন তারুণ্যের প্রতিচ্ছবি। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি তিনি কাজে-কর্মে তারুণ্যের চেতনা রেখে গেছেন। কর্ম মানুষকে বৃদ্ধ করে না এ চেতনাও দিয়ে গেছেন তিনি। একটি প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলতে ও এর মান অক্ষুণœ রাখতে ৭৯ বছর বয়সেও রাজধানী থেকে সুদূর গ্রাম-গঞ্জে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। তিলে তিলে গড়ে তোলা তার এ স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানের নাম বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ। যে প্রতিষ্ঠানের মহাসচিব পদে থেকেও যিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠাতাদের মতো দাঁড় করিয়েছেন। বেসরকারি এ কওমি শিক্ষাবোর্ডকে নিয়ে গেছেন অনেক দূর। যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষারত শিক্ষার্থীরা আজ সরকার মহল থেকে দেশের বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, গবেষকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
৭৯ বছর বয়সী মাওলানা আবদুল জব্বার জাহানাবাদী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গত সপ্তাহে তাকে প্রথমে খিলগাঁওয়ের খিদমাহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ডাক্তারদের পরামর্শে হলি ফ্যামেলি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল দশটা দশ মিনিটে তিনি চলে গেলেন। স্মৃতি-বিস্মৃতির অফুরন্ত এক মায়া রেখে গেলেন। তার আত্মা দেহত্যাগ করে উর্ধ্বজগতে চলে গেলেও তিনি বেঁচে থাকবেন ততদিন যতদিন কওমি মাদরাসা বেঁচে থাকবে। তার অবদান স্বীকার করবে তালিবুল ইলমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম, যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী। তাকে স্মরণে রেখে জাতি কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে অনুপ্রেরণা পাবে। আবদুল জব্বার ১৯৬১ সালে রাজধানীর বড়কাটারা মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করেন। তিনি ওই মাদ্রাসায় শিক্ষকতাও করেন। পরে যাত্রাবাড়ী জামিয়া মাদানিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন এবং সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতার দায়িত্বপালন করেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন, মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, ফরজী হুজুর প্রমুখ মনীষীগণ। তিনি মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ (রহ.) এরও স্নেহধন্য ছাত্র ছিলেন। বেফাকে যোগদানের আগে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ঢাকা মহানগরের সেক্রেটারির দায়িত্বপালন করেন কওমি মাদ্রাসার এ আলেম।
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সুদীর্ঘ ৩৮ বছর যাবৎ। এর মাঝে তিনি বেফাকের বিভিন্ন পদে থেকে তিনি সুচারুরূপে তার দায়িত্বপালন করে গেছেন। সর্বশেষ তিনি বেফাকের মহাসচিবের দায়িত্বপালন করেছেন। তার সামগ্রিক চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-জ্ঞান ছিল কওমি মাদরাসার উন্নতি, অগ্রগতি ও সাফল্য। কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি নিয়ে অনেকই বিভিন্ন সময় কাজ করেছেন, কিন্তু সর্বপ্রথম বেফাকের সাবেক সভাপতি আল্লামা নুরুদ্দীন গহরপুরী (রহ.) এর নির্দেশে তিনি কাজ শুরু করেন। ‘কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি আমরা কেন চাই’ নামে তিনি একটি পুস্তকও রচনা করেন। সরকারি দপ্তরে তিনিই সর্বপ্রথম কাগজপত্র দাখিল করেন। বর্তমান প্রস্তাবিত কওমি সনদের সিলেবাস এটা তার হাতেই তৈরি। কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতির তিনিই ছিলেন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তার মৃত্যুতে এ দেশ ও জাতি একজন আলেম অভিভাবক চিরতরে হারাল।
লেখক: সাংবাদিক/সম্পাদনা: আশিক রহমান