অজয় দাশগুপ্ত
খালেদা জিয়া সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। এখন তাকে খুব একটা দেখা যায় না। আগুনের রাজনীতি, বোমা, সন্ত্রাস, জামায়াতÑ এসব মিলিয়ে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া বিএনপি এখন প্রায় কাগুজে বাঘ। এটা মানতে হবে তাদের আছে বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী। নীরব ভোটার নামে পরিচিত এই মানুষদের বাদ দিলে তার সঙ্গে আসলে তেমন কেউ নেই। আওয়ামী লীগের গত দুবারের শাসন দেশকে নানাভাবে বদলে দিয়েছে। আর্থিকভাবে দেশ যতটা বদলেছে রাজনৈতিকভাবেও কম বদলায়নি। বলতে গেলে হঠকারী রাজনীতি আর জোর জবরদস্তি করে গদিতে যাবার দিন শেষ করে দিয়েছে তারা। যদিও তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ভোটের রাজনীতি নিয়ে এমন রহস্য আর জনগণহীনতা আগে দেখিনি আমরা। সবমিলিয়ে এককেন্দ্রিক একমুখিনতা রাজনীতিকে প্রায় নিঃশেষ করে এনেছে।
এমন বাস্তবতায় খালেদা জিয়াকে নতুনভাবে মাঠে নামিয়েছে সরকারি দল। তারা এই না হয়ে যাওয়া অথবা অদৃশ্য বেগম জিয়াকে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই মাঝে মাঝে সিনে নিয়ে আসেন। হঠাৎ করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তার এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে মুখ খোলা আসলে কিসের ইঙ্গিত?
গোড়াতে বলি, তিনি যা বলেছেন সেখানে নতুন কিছু নেই। এসব চাওয়া সরকারি দলের এজেন্ডায়ও আছে। এগুলো রচনা বইয়ের চাওয়ার মতো। সবাই জানে কিন্তু কেউ মানে না। বেগম জিয়া নিজেও মানেন না। এই জাতীয় ঐক্যের কথা আরও একবার পুরনো বিতর্ক টেনে আনবে। এখন জেগে উঠবে জামায়াত বিতর্ক। এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মতো মৌল বিষয়ে যাদের ভূমিকা দেশবিরোধী, যারা নিষিদ্ধ হবার মুখে তাদের বেলায় একটা স্পষ্ট জায়গা এখনো ঠিক করেনি বিএনপি। তাছাড়া একদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠিন সমালোচনা, অন্যদিকে খালেদা জিয়ার গোঁয়ার্তুমি রাজনীতিকে সঠিক পথে রাখেনি এই দেশে। সেদিনও সদর দরজা বন্ধ করে রেখে বেগম জিয়া শেখ হাসিনাকে শোক জানাতে না দেওয়ার পর জাতীয় ঐক্য কি আসলেই বাস্তব কিছু না অলীক?
তারপরও দেশ ও রাজনীতির স্বার্থে একটা সমঝোতা হওয়া দরকার। কিন্তু খালেদা জিয়ার অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তার নিজের দলে ঐক্য নেই। জাফরুল্লাহ সাহেবরা একবার তার শাড়ি ঠিক করার নামে পা ধরেন আবার বলেন তার নাকি মানসিক সুস্থতা নেই। খালেদা জিয়ার এই প্রস্তাব কি বুদবুদ না মাজাভাঙা বিএনপির কোরামিন? কিছুদিনের মধ্যেই তা বোঝা যাবে।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান