সৈয়দ রশিদ আলম
গাইবান্ধায় সাঁওতাল সম্প্রদায়কে ভিটেমাটি করার কারণটা
ইতোমধ্যে সবার কাছে জানা হয়ে গেছে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে সবচাইতে অত্যাচারের মুখোমুখি হয়েছেন আদিবাসী সন্তানরা। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সময় আদিবাসী সম্প্রদায়কে ভূমিহীন করার কাজ শুরু হয়ে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় সারা বাংলাদেশে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচারের মাত্রা প্রতিদিন বেড়ে যাচ্ছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন সেই ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষ থেকে সবচাইতে বেশি নির্যাতনের শিকার হয় আদিবাসী সম্প্রদায়। যেহেতু তারা প্রতিবাদ করতে পারে না কিংবা প্রতিবাদ করতে চাইলেও বন্ধুকের জোরে, প্রশাসনের জোরে তাদেরকে থামিয়ে দেওয়া হয়, আর বলা হয় আদিবাসীরা সুখেই আছে! নিঃস্ব আদিবাসীরা ইট, পাথর দিয়ে বন্দুকের মোকাবিলা করতে গিয়ে বুকে গুলিবিদ্ধ হচ্ছেন। আর বিবেকবান সমাজ রহস্যময় কারণে নীরবতা পালন করে যাচ্ছে। তারা জানে, আদিবাসীদের পক্ষে কথা বলে কোনো লাভ নেই, কারণ তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের উপঢৌকন পাওয়া যাবে না।
আদিবাসী সমাজকে মনে করা হয় গান, বাজনা নিয়ে মেতে থাকে, কিন্তু গিয়ে দেখবেন, তাদের চুলায় আগুন জলছে না, শিশুরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় মরে যাচ্ছেন, কিন্তু ধর্ম প্রচারকারীরা মানবতা প্রচারকারীর এ বিষয়ে নীরবতা পালন করে যাচ্ছেন। যাদের লক্ষ্য থাকে আদিবাসীদের ধর্মান্তরিত করা, তাদের ভিতর মানবতা কেন থাকবে? একজন আদিবাসীকে ধর্মান্তরিত করলে যে পরিমাণ অর্থ পকেটে আসবে তাদের পাশে দাঁড়ালে তার কিছু আসবে না, এরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে আদিবাসীদের দুঃখের কাহিনী শোনাতে থাকেন, প্রামাণ্য চিত্র দেখাতে থাকেন, যে ডলার, পাউন্ড সঙ্গে করে নিয়ে আসেন তা দিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি ও বাড়ি করে ফেলেন। দুঃখী আদিবাসীরা কখনো রাজনৈতিক দলের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, কখনো গুলিবিদ্ধ হচ্ছেন।
আদিবাসী নেতারা সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের আদিবাসীদের বেদনার কথা বিশ্ব বিবেকের কাছে জানাচ্ছেন, অর্থ সংগ্রহ করছেন, নিজেদের ভাগ্য গড়ছেন, আর আদিবাসীর ভাগ্যকে শুধু দায়ী করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে মহাশ্বেতা দেবীর মতো কোনো বিবেকবান লেখক যদি আগামীতে তৈরি হন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই আদিবাসীদের কান্না, বেদনা তুলে ধরবেন।
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান