আমাদের অর্থনীতির অনুসন্ধান রায়পুরায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গুলিতে নিহত ৩ ভাড়াটে তিন অস্ত্রবাজ আনেন রাজিব
রিকু আমির, রায়পুরা (নরসিংদী) থেকে ফিরে: রায়পুরার নিলক্ষা ইউনিয়নে ঘটে যাওয়া রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পেশাদার অস্ত্রবাজ ভাড়ায় এনে প্রতিপক্ষের উপর গুলি ছোড়া হয় বীরগাঁও বড়বাড়ি গোষ্ঠীর রাজিবের নির্দেশে ও অর্থায়নে বলে আমাদের অর্থনীতির কাছে অভিযোগ এসেছে।
১২ থেকে ১৪ নভেম্বরের রক্তক্ষয়ী সংর্ঘের শেষ দিন এই গুলিতে নিহত হন গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবদুল হক সরকারের তিন সমর্থক। তারা হলেন- আমিরাবাদ গ্রামের মানিক, সোনাকান্দি গ্রামের খোকন মিয়া ও মামুন মিয়া। তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্নকারী নরসিংদী সদর হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী- তাদের বয়স যথাক্রমে- ৪৫, ৩৩ ও ২৪ বছর।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সংঘর্ষের দামামা বেজে উঠার সময়ই নিলক্ষা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম সমর্থক রাজিব লক্ষ্য নির্ধারণ করেন- অস্ত্রবাজ এনে প্রতিপক্ষের উপর গুলি নিক্ষেপ করার। ১৪ নভেম্বর সংঘর্ষের শেষদিনে লক্ষ্য পূরণ করেন রাজিব বলে অভিযোগ আছে।
আমাদের অর্থনীতির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কীভাবে রাজিব অস্ত্রবাজদের গ্রামে প্রবেশ করান এবং কোনস্থান থেকে গুলি নিক্ষেপ করা হয়।
জানা যায়, নরসিংদী শহরে মেঘনার তীরে অবস্থিত থানা ঘাট থেকে তিন অস্ত্রবাজ উঠেন স্পিড বোটে। সেখান থেকে মেঘনা নদী প্রবেশ করেছে রায়পুরায়। স্পিড বোটে থানা ঘাট থেকে রাজিবের বাড়ির ঘাটে পৌঁছতে সময় লাগে সর্বোচ্চ হলে ১৫ মিনিট। মেঘনা নদীর এ অংশের দক্ষিণ দিকে নরসিংদী ও উত্তর দিকে রায়পুরা উপজেলা। নদীটির সংযোগ আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জের সঙ্গে।
নিলক্ষা ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নের চকবাজার ও হাইরমারা ইউনিয়ন হাইরমারা বাজার এলাকা থেকে স্পষ্ট দেখা যায়, রায়পুরার মেঘনা নদীর দৃশ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই স্থানের সাতজন প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ১৪ নভেম্বর বেলা ২টা ৩০ মিনিটের দিকে তারা নিজ চোখে দেখেছেন স্পিড বোটে চালকসহ তিনজন ছিল। এসময় তারা হাইরমারা-চরসুবুদ্ধি অতিক্রম করছিলেন। এটি যাচ্ছিল নিলক্ষার বীরগাঁও গ্রামের দিকে। প্রথমে তারা বুঝতে পারেননি তারা অস্ত্রবাজ ছিল। কিন্তু গুলিনিক্ষেপের খবর শুনে নিশ্চিত হন যে, তারা এই স্পিড বোটেই ছিল সেই অস্ত্রবাজরা। তারা বীরগাঁওয়ের দিকে যাবার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে গুলির ঘটনা ঘটে।
আরেকটি সূত্র জানায়, ১৩ নভেম্বর পরিস্থিতি শান্ত করতে নিলক্ষায় আসেন রায়পুরা উপজেলার আরেক সন্তান, ২০১১ সালে হত্যাকা-ের শিকার নরসিংদী পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের ছোট ভাই, নরসিংদীর বর্তমান মেয়র এবং রাজিউদ্দিনপন্থী আওয়ামী লীগ সমর্থক কামরুজ্জামান। গাড়িবহরসহ তিনি নিলক্ষা ত্যাগের ১০ মিনিটের মধ্যেই গুলির শব্দ পাওয়া যায়।
থানাঘাট থেকে এ সম্পর্কে মিলেছে কিছু উত্তর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ ঘাটের দুজন স্পিড বোট চালক আমাদের অর্থনীতিকে জানান, ১৪ নভেম্বর দুপুরে তারা তিন যুবককে দেখেছেন, একটি স্পিড বোটে উঠতে। তাদের সঙ্গে দুটো ভারী ব্যাগ ছিল। কোমর ছিল ফোলা। তারা যুবকদের চেনেন না বলে জানান। ঘড়ির সময় তারা বলতে পারেননি।
বীরগাঁও গ্রামের একজন তরুণ নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, ১৪ নভেম্বর বেলা ৩টা বাজার ২০ মিনিট আগে স্পিডবোটটি এসে নোঙ্গর করে রাজিবের বাড়ি সংলগ্ন মেঘনা ঘাটে। সেখান থেকে রাজিব ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা অস্ত্রবাজদের গ্রহণ করে নিয়ে যান সংঘর্ষস্থল বীরগাঁও ঘেঁষা পাকা প্রধান সড়ক সংলগ্ন কান্দাপাড়ায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাকা রাস্তার উত্তর অংশে কাঠগাছের বড় একটি বাগানের অস্তিত্ব। বাগান ঘেঁষা উত্তর পার্শ্বেই ফসলি জমি। এই জমির আরও উত্তরে আবদুল হক সমর্থিতদের গ্রাম- সোনাকান্দি ও আমিরাবাদ। ফসলি জমিগুলোর কিছু অংশ পড়েছে সোনাকান্দি ও কিছু অংশ কান্দাপাড়ায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই কাঠবাগানেই তিন অস্ত্রবাজ অবস্থান নেন। মাটিতে শুয়ে গুলি করেন কমপক্ষে ১০ রাউন্ড। অভিযোগ আছে- এখানে পুলিশের উপস্থিতিও ছিল।
সেদিনের দাঙ্গায় প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে অংশ নেয়া বীরগাঁও এবং সোনাকান্দি গ্রামের দুজন নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, তারা স্পষ্ট দেখেছেন, তিন অস্ত্রবাজ মাটিতে শুয়ে গুলি ছুঁড়ছেন আবদুল হক সমর্থকদের দিকে। পাশেই ছিল বেশকিছু পোশাকধারী পুলিশ। খোকন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে যাবার পর দেখেছেন সোনাকান্দির প্রত্যক্ষদর্শী।
চাইনিজ রাইফেলের সঙ্গে পূর্ব থেকে পরিচিত এ দুজনের একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে- তিনি দেখেছেন অস্ত্রবাজরা চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করেছিল।
নরসিংদীতে বেশকিছু চাইনিজ রাইফেলের অস্তিত্ব আছে এবং ব্যবহারও করা হয় বলে এই প্রত্যক্ষদর্শী ও নরসিংদী শহরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বেশকিছু তরুণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
বেশকিছু প্রত্যক্ষদর্শী ও আবদুল হক-তাজুল পক্ষের দাঙ্গাবাজ আমাদের অর্থনীতিকে জানান, তারা অস্ত্রবাজদের কাছ থেকে ছোড়া গুলির শব্দ শুনেছেন ১০ থেকে ১২বার। প্রথমে তারা বুঝতে পারেননি, এসব কিসের শব্দ। গুলির শব্দ বোঝার পর তারা সতর্ক হয়ে পড়েন এবং গুলি আসা স্থানে পুলিশের উপস্থিতি তাদের ভীষণ কৌত’হলী করে তোলে। তাদের ভাষ্য- পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে।
রায়পুরা থানার ওসি (তদন্ত) বলেন, পুলিশ ফাঁকাগুলি ছুঁড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসনের আদেশে রায়পুরা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ূন কবির সেদিন গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে। তার নির্দেশেই পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। সোমবার দুপুরে তিনি আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, মানুষ লক্ষ্য করে একটি গুলিও ছোড়া হয়নি।
সেসময় উপস্থিত ছিলেন- রায়পুরা থানার ওসি আজহারুল ইসলামও। সংঘর্ষে আহত হয়ে বর্তমানে তিনি বিশ্রামরত বলে তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
নরসিংদী সদর হাসপাতাল, থানা পুলিশ ও গুলিতে নিহতদের পরিবার সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সোনাকান্দি গ্রামের মামুন নাকে গুলিবিদ্ধ হন, মাথার পেছন ভেদ করে গুলি বেরিয়ে যায়। সোনাকান্দিরই খোকনের বুকে গুলি লেগে পিঠ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। আমিরাবাদের নিহত মানিকের গুলি মাথার সামনে দিয়ে লেগে পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, গুলি তাদের দেহ ভেদ করে বেরিয়ে গেছে। এ থেকে ধারণা করা যায় যে বা যেসব আগ্নেয়াস্ত্র সংঘর্ষে ব্যবহার করা হয়েছিল, সেসব সাধারণ নয়। চিকিৎসকদের জোর ধারণা- রাইফেলের গুলিতেই বিদ্ধ হন ওই তিনজন।
আক্রান্ত এলাকায় দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, অস্ত্র তো আমরাও চালাই। এ ধরনের সংঘর্ষে আমরা শর্টগান, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করি। খুবই বড় ধরনের কোনো ঘটনা হলে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা ছাড়া কোনো ধরনের প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয় না। আমাদের ব্যবহৃত শর্টগানের গুলিতে কেউ মারা যাবে না। কিংবা এ ধরনের ঘটনায় যে ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তাতে কেউ মারা যাবে না।
রায়পুরা থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, ঘটনাস্থলে সেদিন গুলির শব্দ পেয়েছি। মনে হয়েছে, পাইপগান বা এ জাতীয় হালকা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে।
ওসির (তদন্ত) বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আক্রান্ত এলাকায় দায়িত্বরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের একজন সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, পাইপগানের গুলিতে বিদ্ধ হয়ে কেউ মারা যাবার প্রশ্নই আসে না। যদি পাইপগান খুব শক্তিশালী মানের হয়, নল বড় হয় এবং দেহে ঠেকিয়ে গুলি করা হয়, তবে মারা যেতে পারে। কিন্তু দেহ ভেদ করতে পারবে না।
কিন্তু রাজিব কেন অস্ত্রবাজ ভাড়ায় এনে প্রতিপক্ষের উপর বদলা নেয়ার পরিকল্পনা করল, তার সঙ্গে কীভাবে শত্রুতা সৃষ্টি আবদুল হক সরকারদের, ভাড়ার অর্থের উৎসই বা কী, নিশ্চিত না হওয়া গেলেও ধারণা পাওয়া গেছে রাজিব কত টাকায় অস্ত্রবাজদের ভাড়া করেছেন- আমাদের অর্থনীতির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্যও।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাজুল-আবদুল হক ছাড়াও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলেন- রাজিবের গোষ্ঠীর প্রধান নেতা আলী আজগর মোল্লা। গোষ্ঠীগত সম্পর্কে রাজিব ভাতিজা হন আজগরের। বিএনপি সমর্থিত এই প্রার্থীর প্রতীক ছিল ধানের শীষ। একাধারে তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও বীরগাঁও ঘেঁষা আতশ আলী বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তারই পরামর্শে রাজিব হাত মেলান- বীরগাঁওয়ের আরেক প্রতাপশালী গোষ্ঠী ও চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম সমর্থক গোপীবাড়ির সঙ্গে। অভিযোগ আছে- রাজিবকে সেতু হিসেবে ব্যবহার করে বড়বাড়ির অন্যতম নেতা আলী আজগর হাত মেলান মীরবাড়ির সঙ্গে। এ ঘটনা গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হবার একমাস মধ্যকার।
আলী আজগরের উদ্দেশ্য- নিলক্ষা ইউনিয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর প্রধান সেনাপতি, বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া, তাকে সেতু হিসেবে ব্যবহার করে রাজিউদ্দিনের সঙ্গে সম্পর্ক করে আওয়ামী লীগে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা। এর মাধ্যমে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য নিজেকে তৈরি করা। এটা যদি না-ও হয়, তবে যেন অন্ততঃ এলাকায় নিজের অবস্থান যাতে আরও মজবুত হয়, একইসঙ্গে প্রশাসনের সঙ্গে যাতে সখ্যতা গড়ে উঠে।
অভিযোগ আছে- যেহেতু বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা আজগরের নির্দেশে রাজিব হাত মেলান গোপীবাড়ি তথা রাজিউদ্দিন রাজুপন্থী আওয়ামী লীগের সঙ্গে। সেহেতু আজগর ও রাজিবের টার্গেট ছিল- ক্ষমতাসীন দলের হয়ে বিদ্রোহীদের এমনকিছু করা (আবদুল হক সরকার সমর্থক), যাতে অল্প সময়ে সংসদ সদস্যের আত্মায় স্থান পাওয়া যায়।
এছাড়া আনুমানিক ২৮-৩০ বছর বয়সী রাজিবের ইচ্ছা আছে- তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করবেন। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়াজ তুলে ছিলেন নির্বাচনের। কিন্তু চাচা আজগর আলীর দিকে তাকিয়ে এ থেকে তিনি পিছপা হন এ যাত্রায়। এসব লক্ষ্য পূরণে চাচা আজগর লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে এবং রাজিব ভাড়াটে অস্ত্রবাজ এনে তাজুল ইসলামের পাশে দৃঢ় অবস্থান নেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে পাওয়া সূত্রগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী- বীরগাঁও এর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শওকত হোসেনের ছেলে রাজিব নরসিংদী পল্লী বিদ্যুতের রায়পুরা জোনাল অফিসে তৃতীয় শ্রেণির একটি পদে চাকরি করছেন প্রায় আড়াই বছর ধরে। চাকরি পাবার এক বছরের মধ্যে বিপুল অর্থের মালিক বনে যান এই রাজিব। অর্থের মালিক হবার পর চারিত্রিকভাবে ভদ্র রাজিবের মধ্যে চলে আসে উচ্ছৃঙ্খলতা।
অভিযোগ পাওয়া গেছে- রাজিব চাকরি পাবার পর বিদ্যুতায়িত হয় আমিরাবাদ, সোনাকান্দি গ্রামের কিছু অংশ। এখান থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেই রাজিব আঙুল ফুলে কলাগাছ হন। আর সেই অর্থই বিনিয়োগ করেন ভাড়াটে অস্ত্রবাজদের পেছনে।
বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী- রাজিব নগদ ৫ লাখ টাকায় ভাড়া করেন অস্ত্রবাজদের। গ্রামবাসীদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী- অর্থের পরিমাণ ৩ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত।
অভিযোগ আছে- গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পূর্বে রাজিব রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে সমর্থন না করলেও নিষ্ক্রিয়ভাবে চাচা আলী আজগরের সঙ্গে বিএনপি করতেন। নির্বাচনের একমাসের মধ্যে গোপীবাড়ির সঙ্গে হাতমিলিয়ে নাম লেখান রাজিউদ্দিনপন্থী আওয়ামী লীগ সমর্থকদের খাতায়। রাজিব এখনও আছেন রাজিউদ্দিনপন্থী আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায়। এটা যে দৃশ্যমান সেটার উদাহরণ দিয়ে হাইরমারা, নিলক্ষা, চরসুবুদ্ধি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, ১৩ নভেম্বর নরসিংদীর মেয়র এবং রাজিউদ্দিনপন্থী আওয়ামী লীগ সমর্থক কামরুজ্জামান নিলক্ষায় আসেন। সেদিন ও এর আগেরদিন কড়া পুলিশি প্রহরায় সঙ্গে নিয়ে রাজিব প্রবেশ করেন বীরগাঁওয়ে।
অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য আমাদের অর্থনীতি একাধিকবার যায় রাজিবের বাড়িতে। কিন্তু সেখানে কেউ নেই বলে জানান রাজিবের প্রতিবেশীরা। আমাদের অর্থনীতিকে কড়া নিষেধ করা হয় রাজিবের বাড়ির উঠোনে যেতে।
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজগর এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি কারো সঙ্গে হাত মিলাইনি। শান্তিপূর্ণ মানুষ হিসেবে দাঙ্গা দমনে কাজ করেছি। রাজিবের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সে আমার ভাতিজা ঠিকই, কিন্তু সে গুলি করেছে না কে গুলি করেছে, আমি জানি না। এরপর তিনি বলেন, পুলিশ গুলি করছে, তাদের গুলিতে মানুষ মারা গেছে, এটা তো পুলিশই স্বীকার করছে। এ প্রসঙ্গে আবার প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওসব কে গুলিটুলি করছে, ওসব নিয়া আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।
১৪ নভেম্বর সংঘর্ষের সময় পুলিশ যেখান থেকে দাঙ্গা দমন করছিল, সেখান থেকে ভাড়াটে অস্ত্রবাজরা গুলি ছোড়ে- এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা খাতুন সোমবার দুপুরে বলেন, প্রশ্নই আসে না। এ অভিযোগ সঠিক নয়। তাকে আরও কিছু প্রশ্ন করলে বলেন- আমাদের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, তদন্ত চলছে। এরপরই আরও ভালভাবে বলা যাবে। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু