মেয়েকে বাঁচাতে দুই পা খুইয়ে এখন শুধুই নিরাপত্তা চান শাহানুর
আল-আমীন আনাম: দিন এনে দিন খাওয়া ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামের শাহানুর বিশ্বাস। অন্যের বাড়িতে কৃষিকাজ করে সংসার চালান তিনি। আর্থিক সমস্যার কারণে নিজে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাগ্রহণ না করতে পারলেও দুই মেয়ে শারমিন আক্তার এবং শাহানাকে প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার স্বপ্ন ছিল শাহানুরের। কিন্তু প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা তার সেই স্বপ্নকে গুলি ও ধারালো অস্ত্রের কোপে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। দুই মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার বিচার চাইতে গিয়ে এই নৃশংস হামলার শিকার হন শাহানুর বিশ্বাস।
সোমবার ঢাকার শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় তলার বি ওয়ার্ডের জি-৬১ নম্বর বেডে (পঙ্গু হাসপাতাল) গিয়ে দেখা যায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন শাহানুর বিশ্বাস।
বড় মেয়ে শারমিন আক্তার যশোর সরকারি মহিলা কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে পড়ছেন। ছোট মেয়ে শাহানা স্থানীয় একটি স্কুলে পড়েন সপ্তম শ্রেণিতে।
অভিযোগ আছে- বাড়িতে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই তাদের উত্ত্যক্ত করতো স্থানীয় বখাটে কামাল, জাহিদ, বিল্লালসহ বেশ কজন। উত্ত্যক্তের মাত্রা ছাড়িয়ে ছিল সীমা।
শাহানুর ও তার স্বজনরা জানান, স্থানীয় সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী সন্তোষ, ইসহাক, মাহবুব মেম্বারের ছেলে ও ঘনিষ্ঠজন ওই বখাটে সন্ত্রাসীরা। তাই ভয়ে এতদিন মুখ খোলেননি নিরীহ শাহানুর। ভয়ে হাসপাতালে শুয়েও শান্তি পাচ্ছেন না তিনি।
শাহানুরের স্বজনরা জানান, গত ১৬ অক্টোবর বখাটেরা আবারো উত্ত্যক্ত করে দুই মেয়েকে। এর প্রতিবাদ করেন শাহানুর। এরপরই নেমে আসে বর্বরতা। সন্ত্রাসী মোতালেব, কামাল, মাহবুব, জাহিদ, বিল্লাল, হাসানসহ আরও কজন ছুরি, চাপাতি, রড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপর। নির্মমভাবে পেটায় তাকে। থেঁতলে দেয় দুই পা। চিরদিনের মতো তাকে পঙ্গু করে দিতে রড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দুই পা ক্ষতবিক্ষত করা হয় তার। মৃত ভেবে ঘটনাস্থলেই ফেলে রেখে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে শাহানুরকে ঝিনাইদহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিয়ে আসা হয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে।
অপরাধীরা প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট, তাই তাদের বিচার হবে কি-না এমন সংশয়ে রয়েছেন শাহানুরের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। আর বিচার যদি না হয় তাহলে আল্লাহর কাছে বিচারের ভার দিয়েছেন শাহানুর, তার স্ত্রী মোসাম্মৎ আরজিনা, দুই কন্যা ও স্বজনরা।
শাহানুরকে ক্ষতবিক্ষত করার পর স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে প্রভাবশালীদের চাপে পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন শাহানুর ও তার প্রতিবেশীরা। পরে ঝিনাইদহ আমলি আদালতে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়। কিন্তু মামলার আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় ভয় ও আতঙ্কে রয়েছেন তারা। শাহানুরের বড় ভাই সামিউল বিশ্বাসকে প্রতিনিয়ত মামলা তুলে নেওয়ার চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সম্পাদনা: আনোয়ার