অজয় দাশগুপ্ত
কিছু কিছু নেতা থাকে যাদের কাজ দলের বারোটা বাজানো। সব দলে, সব জায়গায় এদের দেখা মিলবে। সরকারি দলে এমন নেতা এখন ভুরি ভুরি। দলে শুধু না, উড়ে এসে জুড়ে বসারাও ভোকাল। আজকাল নেতাদের কাজ করতে হয় না। কথাই কাজের বাপ এখন। সঙ্গে আছে চটজলদি লিখে হয় মিডিয়ায়, নয়তো ফেসবুকে ধরিয়ে দেওয়া। বামদলের প্রধান যেভাবে রেগুলার কলাম লেখেন হররোজ ফেসবুকে হানা দেন, মনে হবে এটাই রোজকার রুটিন। জাসদ খ্যাত এখনকার জোট মন্ত্রীও সমানে তা করে যাচ্ছেন। ঘোরতর বিপদে থাকা বিএনপির নেতা গয়েশ্বর বাবুও মুখর। দলের হাল ধরার লোক না থাকলেও বচনের কমতি নেই।
দেখলাম তাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট দেশত্যাগী বিতর্কিত তারেক জিয়ার জন্মদিন পালনের ভাষণে গয়েশ্বর রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। অযাচিতভাবে হোক আর যেভাবেই হোক এ বিষয়ে তার বক্তব্য পরিবেশকে আরও ঘোলাটে করবে মাত্র। বিবেচনাহীনভাবে সীমান্ত খুলে দেওয়ার কথা বলায় মানবিকতার সস্তা ভাবনা থাকলেও রাজনীতি নেই। দেশে সমস্যার অন্ত নেই। ডিজিটাল দেশে হিন্দু, সাঁওতাল, উদার মুসলিমের জীবন আছে শঙ্কায়। দাউ দাউ আগুনে পোড়া সাঁওতালদের বাড়ি দেখে মন জাগল না, বিবেক কথা বলল না কেন? কোনো রাজনীতি তাদের অভয় দিতে গিয়েছিল? নিজের বাড়ির আগুনে পোড়া আলু খাওয়া মানুষের প্রতিবেশী প্রেম কেমন জানি মেকী মনে হয়। এটা বুঝি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হাল খুব খারাপ। আমরা দুয়ার খুলে দিলেই কি তা ভালো হয়ে যাবে? এর আগেও তারা ঢুকেছিল। ঢোকার পর চাটগাঁর একাংশকে জামায়াতের স্বর্গ বানিয়ে ছেড়েছে এরা। আমি মানুষের শরণার্থী হবার ঘোর বিরোধী। এরা মোহাজের বাঙালি বা রোহিঙ্গা যাই হোক না কেন, নিজেরা উদ্বাস্ত বলে, নিপীড়িত বলে যে দেশে যায় সে দেশেরও বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে। কারণ সেসব দেশের ভূমিসন্তান নয় বলে তাদের কোনো টান থাকে না। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কিছুই জানে না বলে এরা হয়ে ওঠে বিধ্বংসী। রামুর হামলার পেছনে এদের নাম জড়িয়ে তাই।
ফলে সমাধানের কূটনৈতিক দিকটি ভাবতে হবে। হুজুগে বাঙালি এর মধ্যে পাহাড়ি আদিবাসীদের খেদিয়ে এদের আনবার খোয়াব দেখছে। নিজ দেশে এতবড় বিপদ ও অঘটন টেনে আনার নাম মানবিকতা? নেতা নামধারীদের উস্কানি আগুনে আরও ঘি ঢালবে। প্রয়োজন কূটনীতিক চাল। নোবেল জয়ীদের ভূমিকা রাখতে বাধ্য করা। আমাদের দেশের বিজয়ীও যেন বাদ না পড়েন। তবেই সমাধান পথ খুঁজে নেবে। মিয়ানমারের এমন ভূমিকা নিন্দনীয়। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ রাখা দুনিয়ার দায়িত্বও বটে।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান