আশুলিয়ায় কারখানায় আগুন ২৬ শ্রমিক দগ্ধ, আহত ৩৯
আজাদ হোসেন সুমন: সাভারের আশুলিয়ায় কালার ম্যাচ বিডি লিমিটেড কারখানায় লাগা আগুনে দগ্ধ হয়েছেন ২৬ জন শ্রমিক। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কারখানাটিতে আড়াই শতাধিক শ্রমিক কাজ করতেন।
ফায়ার সার্ভিস, আশুলিয়া থানার পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকাল ৪টার দিকে কারখানার আধা পাকা একতলা ভবনে হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। আগুনের তীব্রতা বেড়ে গেলে টঙ্গী, উত্তরা, সাভার ও ঢাকা থেকে আরও ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নেভায়। এর আগেই মালামাল ও যন্ত্রসহ কারখানাটি প্রায় পুড়ে যায়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, আগুনে গ্যাস লাইট, কাগজের বাক্স, যন্ত্র ও কারখানাটি পুড়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ২১ জন শ্রমিক ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ জলি (২২), মুক্তি (১৯), ফিয়ারা (৩০), আঁখি (১৫), খাদিজা (১৩), নাজমা (১৩), হালিমা (২০), রানী (২০), সোনিয়া (১৬), হাফিজা (১৭), রীনা (১৬), ফাতেমা (১৫), সিমু (২৫), সোনিয়া (২০), লাভলী (৩০), শরিফা (২৫), সখিনা (২৫), ফারজানা (১৮), জান্নাতি (২০) ও বৃষ্টি (২০)। আর এনাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেনÑ রতœা (২২), রহিমা (১৭), কুলসুম (২৩), শারমিন (২৫) ও আকলিমা (২০)।
শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার মাহমুদুল হক জানান, বিকাল ৪টা ২৪ মিনিটে কারখানাটিতে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়। কর্মরত শ্রমিকরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনের লেলিহান শিখা তাদের গ্রাস করে। সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে ৬টা ১৫ মিনিটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট কাজ করে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আহত শ্রমিক সিমু, লাভলীসহ আরও কয়েকজন বলেন, বিকালের দিকে তারা কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে কারখানার ভেতরে আগুন লেগে যায়। আগুন দেখে দৌড়ে বের হতে হতেই পুরো কারখানায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দগ্ধ হন শ্রমিকরা।
আশুলিয়ার নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক অভিজিৎ রায় বলেন, অগ্নিদগ্ধ ১৩ নারী শ্রমিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই ১৩ জনের তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের শরীরের অন্তত ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে। আর অন্যদের হাত-পা ও মুখের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ করে পুড়েছে।
গতরাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, এ পর্যন্ত আমরা ২১ জন দগ্ধ শ্রমিককে পেয়েছি। সন্ধ্যায় ৬টি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের নিয়ে আসা হয়। এদের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। একে আমরা মেজর বার্ন বলি।
এনাম মেডিকেলের পরিচালক আনোয়ারুল কাদির বলেন, এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচ নারী শ্রমিকের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সম্পাদনা: মাহমুদুল আলম