জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
অং সান সু চির নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেবার দাবি উঠেছে। তার কাজ দেখে আমার কাছে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অহেতুক লাগছে। রোহিঙ্গারা যেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসছে মায়ানমার ছেড়ে, মরছে, সেখানে সু চি চুপ করে বসে আছেন! কি লাভ হলো তার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়ে?
আমার একজন ভীষণ প্রিয় লেখক আছেন, যার নামÑ আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। ১৯৫৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই লেখককে আমি লেখালেখির বাইরেও ব্যক্তিগতভাবে ভালোবাসি এবং মন থেকে শ্রদ্ধা করি। কারণ লেখায় তিনি যে চরিত্রগুলোকে লিখেছিলেন, সেগুলোর বেশিরভাগই তিনি নিজে। যে চরিত্রগুলো সারাজীবন ধরে যুদ্ধ করে, পরাজিত হয়, কিন্তু ধ্বংস হয় না।
হেমিংওয়ে হচ্ছেন সে রকম একজন চরিত্র। যে জেলেদের বিপন্ন জীবন নিয়ে তিনি ‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ লিখলেন, নোবেল পুরস্কার, পুলিৎজার পুরস্কারের টাকাও তিনি কিউবার সেই স্থানীয় জেলেদের সেবায় ব্যয় করেছেন। জেলেরা যাকে ভালোবেসে ডাকতÑ ‘বন্ধু’ বলে। জাহাজের প্রপেলারের লোহা কুঁদে তারা ভালোবেসে বানিয়েছিল হেমিংওয়ের অবক্ষ মূর্তি। যে কেউ কিউবায় হেমিংওয়ের বাড়িতে গেলেই এখনো দেখতে পাবে সেটা।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, হেমিংওয়ে যখন যুবক বয়সে প্যারিসের শেক্সপিয়ার অ্যান্ড কোম্পানি নামের বইয়ের দোকানটায় লেখক জেমস জয়েস আর এজরা পাউন্ডের সঙ্গে দিনরাত আড্ডা দিতেন তখন একবার আরেক বিখ্যাত লেখক গারট্রুড স্টাইন বিরক্ত হয়ে বলেছিলেনÑ তোমরা হচ্ছো একটা হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম (ইউ অল আর এ লস্ট জেনারেশান)! স্টাইন রেগেমেগে যাদেরকে লস্ট জেনারেশান বলেছিলেন তারা প্রত্যেকেই বিশ্বসাহিত্যে সদম্ভে দাঁড়িয়ে আছেন, তিনজনই নোবেল বিজয়ী! তার চেয়েও বড় কথা তিনজনই তাদের লেখায় গেয়ে গিয়েছেন মানুষের জয়গান, মানবতার জয়গান।
গারট্রুড স্টাইন অং সান সু চিকে দেখলে কি বলতেন কে জানে! তবে নিশ্চয়ই তিনি বুঝতেন যে তিনজন লেখককে তিনি রেগে গিয়ে ‘লস্ট জেনারেশান’ বলেছিলেন তারাই আসলে শান্তিতে নোবেল পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। যিনি শান্তিতে নোবেল পেয়ে এই মহা-অশান্তির সময় চুপ করে আছেন তিনি নন। লেখক ও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, মাইক্রোসফট
ফেসবুক থেকে