রোকনুজ্জামান মিলন, ঝিনাইদহ : মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি ঝিনাইদহের বীরাঙ্গনা জয়গুননেছা। স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজের স্বামী হাবিবুর রহমান ও সতীনের যুবতী মেয়ে হাসিনা খাতুনকে হারিয়েছেন ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চন নগর পাড়ার বীরঙ্গনা জয়গুননেছা। পাক সেনারা তাদের ধরে নিয়ে যেয়ে আর ফেরত দেয়নি। নিজের উপর পাকবাহিনীর পাশবিক নির্যাতন ও বর্বরতার সেই বীভর্ষ মুহুর্ত গুলোর কথা মনে হলে গভ শিউরে ওঠে তভা । শরীরের দগদগে সেই ভয়াল স্মৃতি চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। যুদ্ধ শেষে স্মামীর কেনা বসত বাড়ি জবর দখল করে নিয়েছেন সুন্দর আলী নামে এক ব্যক্তি। এত কিছুর পরেও এই বীরাঙ্গনার কপালে মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি। পায়নি কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা । একমাত্র সম্বলছিল চাকরির পেনশন সেটাও বিক্রি করে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণে এই বৃদ্ধ বয়সে সার্টিফিকেট ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে ছুটছেন এই অফিস থেকে ওই অফিস। সব বিফলে গেছে জয়গুননেছার। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এসে জয় গুন নেছা বাকরুদ্ধ কণ্ঠে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। জয়গুনন্নেছার কাছে থাকা কাগজপত্র ঘেটে জানা গেছে, তিনি পাকবাহিনীর হাতে নির্যাতিত একজন নারী। পরে তিনি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধ করেন ৮নং সেক্টরে। যুদ্ধের আগে তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে চাকরি করেন।সেই সময় কলেজের একমাত্র সিভিল প্রিন্সিপাল আব্দুল করিম সাহেব তার চাকরিটি দেন।। দেশ স্বাধীনের পর তিনি মা ও শিশু স্বাস্ব্য কেন্দ্রে চাকরি করতেন। যুদ্ধকালীন সময় তার উপর রাজাকার ও পাকবাহিনী নির্যাতন করেছেন ব্যাপক।
দেশীয় রাজাকারদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করেছেন ডা. কে আহামদ, ও মাহতাব হোসেন মাখন। পবহাটির রওশন ও আব্দুর রহমান দুধসরের মজিবর, ব্যাপারী পাড়ায় নুরনবী, হিরেডাঙ্গা গ্রামের মোস্তফা রাজাকারারের নাম উল্লেখ করেন জয়গুননেছা। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অন্তর্ভুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা খন্দকারনুরুল ইসলাম, ও তত্বাবধায়ক এম এ আব্দুল ওহাব স্বাক্ষরিত তালিকায় জয়গুননেছার নাম রয়েছে ১৭ নং ক্রমিকে। ২০১০ সালের ২৫মে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৪৮৮ জন মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়ন করে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেই তালিকায় জয়গুননেছার নাম রয়েছে ১৭১ নং ক্রমিকে।জয়গুননেছার কাছে মুক্তিযোদ্ধা পুর্নবাসন সোসাইটির সনদ ও সরকারের দেওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদ রয়েছে। তাতে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানীর স্বাক্ষর রয়েছে। বীরঙ্গনা জয়গুননেছা দ্রুত তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান