রাশেদা কে চৌধুরী
মেয়েদের বাল্যবিবাহ নিরোধ নিয়ে যে আইনটা মন্ত্রীসভায় অনুমোদন পেল তা একেবারে সহজ হওয়া উচিত ছিল। কোনো বিশেষ, যদি, তবে, কিন্তু থাকা উচিত ছিল না। কারণ আমাদের পক্ষ থেকে দাবি ছিল, এটা সহজ-সরল ১৮ বছর করার। এতে আমাদের যে অর্জনগুলো রয়েছে মাতৃমৃত্যু হার কমানো, মেয়েদের পড়ালেখার হার বাড়ানো, মেয়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বাড়বে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জন রয়েছে বাংলাদেশের, সেসব ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। মেয়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বাড়বে। বাংলাদেশে তো নারী বান্ধব আইন প্রচুর রয়েছে। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন তো সবচেয়ে বড় বিষয়। ‘বালবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৬’তে যে বিশেষ ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে, তার অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহার হতে পারে। আপনি রাঙ্গামাটির পার্বত্য এলাকার কোনো একটা প্রত্যন্ত গ্রামে কি করে বাল্যবিবাহ ঠেকাবেন? হাওর, চর-বাওর অঞ্চলে বাল্যবিবাহ সম্পর্কে জানাবে কে, এটাকে খুঁজবে কে? আমাদের জন্ম নিবন্ধন প্রদ্ধতি তো খুবই ত্রুটিপূর্ণ। জন্ম নিবন্ধনে ১৬ বছরকে আগে ১৮ বছর বলে চালিয়ে দেওয়া হতো, এখন তো ১৪ বছরকে ১৬ বছর বলে বিশেষ ব্যবস্থা বলে এটাকে দূর করে ফেলা হবে। আমরা এমনিতেই মেয়েদের মাধ্যমিকে ঝড়ে পরার হার কমাতে পারছি না। এই বিশেষ আইনের ক্ষেত্রে আমাদের আশঙ্কা, মাধ্যমিকে মেয়েদের ঝড়ে পরার হার আরও বাড়বে।
বাল্যবিবাহ আইনের বিষয়ে বিশেষ ক্ষেত্রে সম্পর্কে বলা আছে, বিয়ের বয়স ১৮ বছরই থাকল। কিন্তু এটাকে আদালতের অনুমতি নিয়ে অথবা বাবা-মা অভিভাবক যদি মনে করেন বিশেষ কোনো পরিস্থিতি ঘটলে, তারা বালবিবাহ দিতে পারবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, আইনে এই বিশেষ ব্যবস্থা থাকলে আইনের অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে যায়। আইনের ক্ষেত্রে যদি, তবে, কিন্তু, বিশেষ এসব কথা থাকা ঠিক নয়। সোজা সহজ আইন থাকা উচিত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আমরা তো বাংলাদেশে আইনের প্রয়োগের ব্যাপারে দেখেছি। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ খুবই দুর্বল। নারী বান্ধব আইন বাংলাদেশে কম তো নেই। এই আইনের আওতায় বাল্যবিবাহ রোধ করা যাবে না, তাই মনে হয় আমার। এতে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
পরিচিতি: শিক্ষাবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান