ট্রাম্প জিএসপি ফিরিয়ে দেবেন আশা বাণিজ্যমন্ত্রীর
হাসান আরিফ: বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্থগিত হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি ফিরিয়ে দেবে বলে আশা করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ডিসেম্বরে যে ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট (টিকফা) চুক্তি হওয়ার কথা ছিল তা আপাতত হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
গতকাল সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী এই কথা বলেন। বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন ও অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মো. শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়েছিল। এখন রাজনৈতিকভাবেই দেশটির সরকার বদল হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার গঠন করছেন। আমাদের দৃঢ় আশাবাদ ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে আগামীতে নতুন যে সরকার গঠন হচ্ছে, আশা করি এই সরকারের এ ধরনের কোনো উদ্দেশ্য থাকবে না। কারণ অতীতে যখন জিএসপি বাতিল করা হয়েছিল তখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। আমাদের দেশেরও কোনো কোনো নেতা-নেত্রী জিএসপি বাতিল চেয়েছিলেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, সম্প্রতি দেশটির নতুন সরকার গঠনের কারণে আপাতত টিকফা স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশে টিকফা’র বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে এবং দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এজেন্ডা নির্ধারণ ও নতুন সরকারের মনোভাব বুঝতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী মার্চ অথবা এপ্রিল মাসে বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয় নিয়েই বার্নিকাট সচিবালয়ে এসেছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১০০ দিনের কর্মসূচির আওতায় প্রথমেই টিপিপি চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। টিপিপি বাতিল হলে বাংলাদেশ ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবে। টিপিপি ডব্লিউটিও-এর মূল নীতির পরিপন্থি ছিল। টিপিপি বাতিল হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। গত অর্থ বছর বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬২২০ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে আমদানি করেছে ১০০৬ দশমিক ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত বাণিজ্য ৫২১৪ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সিংহভাগ তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। আগেও তৈরি পোশাকের উপর কোনো জিএসপি সুবিধা দিতো না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তামাক, প্লাস্টিক, সিরামিক, টেবিল ওয়্যার এবং চামড়ার ব্যাগ রপ্তানির উপর জিএসপি সুবিধা দিতো, তা মোট রপ্তানির খুবই সামান্য ছিল। শ্রমিকদের অধিকার, নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয়ে ইউএসটিআর-এর দেওয়া শর্ত বাংলাদেশ সফলভাবে পূরণ করলেও শুধু রাজনৈতিক কারণেই বাংলাদেশকে দেওয়া সামান্য পরিমাণের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশকে দেওয়া জিএসপির স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার না করার কোনো কারণ নেই। সম্পাদনা: শারমিন আজাদ