ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
কামরুল আহসান: ফিদেল ক্যাস্ট্রো আর নেইÑ এ খবর এখন আর জানতে বাকি নেই তার শত্রু ও মিত্রদের। কেউ প্রকাশ করছেন দুঃখ, কেউ বা প্রকাশ করছেন আনন্দ। কেউ কাঁদছে কেউ নৃত্য করছে। কেউ বলছেন, পৃথিবীর শেষ বিপ্লবীর অন্তর্ধান। কেউ বলছেন, একজন স্বৈরশাসকের প্রয়াণ।
বড় ভাই ফিদেলের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করবেন না তাদের বোন জিয়ানিতা ক্যাস্ট্রো। জিয়ানিতা এখন থাকেন আমেরিকার মিয়ামিতে। ১৯৬৫ সালে তিনি কিউবা ত্যাগ করে মেক্সিকো চলে আসেন। জিয়ানিতাও খুব সমালোচনাকারী ছিলেন কিউবার সাম্যবাদের নামে স্বৈরতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার। তিনি বলেছিলেন, ‘চারদিকে জলঘেরা কিউবা দ্বীপটি হচ্ছে আসলে বিশাল একটা জেলখানা।’
কিউবা থেকে বহিরাগত মায়াবি ও ফ্লোরিডার অভিবাসীরাই নৃত্য করছে বেশি। রাস্তায় তারা জড়ো হয়েছে কিউবার পতাকা নিয়ে। তারা বলছে, তারা কোনো মানুষের মৃত্যুতে উৎসব করছে না, উৎসব করছে একটি ভুল আদর্শের প্রয়াণে। সাম্যবাদের নামে কিউবা দ্বীপটি ছিল আসলে এক জেলখানা। না সেখানে ঢুকতে দেওয়া হতো বহিরাগত কোনো মানুষকে না সেখান থেকে বেরোতে পারতো কোনো মানুষ। এরমধ্যে বেকারত্ব বেড়েছে। চিকিৎসা, শিক্ষায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও দেশকে করে গেছেন সম্পদহীন। সবচেয়ে বড় সমস্যা তারা ছিল আক্ষরিক অর্থেই পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ। এরজন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সে দেশের কিছু মানুষও। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই তারা এ খবরটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অনেকবার তারা এরকম খবর শুনেছেন। তাই প্রথমবার শুনেও ঠিক বিশ্বাস করতে পারেনি। এখন এটা নিশ্চিত যে, একটা মানুষের সঙ্গে একটা যুগের অবসান হয়েছে।
অবশ্য ফিদেলের মৃত্যুতে শোকও প্রকাশ করছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতিরা। হয়তো তা রাষ্ট্রীয় নিয়ম হিসেবেই। মানুষটি পৃথিবীর অনেক দেশের জন্যই খুব অস্বস্তিকর ছিলেন। ৯০ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন ৫০ বছরের এক ইতিহাস। ফিদেলের মৃত্যুতে ৯ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন তার ছোট ভাই দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো। মৃত্যর পর কীভাবে তাকে সৎকার করা হবে তার সব দিকনির্দেশনা ফিদেল দিয়ে গেছেন। গত এপ্রিল মাসে তিনি বলেছিলেন, ‘শিগগিরই আমি ৯০ বছরে পড়ব। আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত ঘনিয়ে আসছে, যা সবার জন্যই আসে। তা নিয়ে আমি ভাবিত নই। আমরা যে বিশ্বাস নিয়ে লড়াই করেছি সে লড়াই চলবে’।
আগামী ৪ ডিসেম্বর তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। তার শবদেহটি দাহ করা হয় ২৬ তারিখ সকালেই। এখন দেহভস্ম নিয়ে সমগ্র কিউবায় র্যালি করে বেড়ানো হবে। বিপ্লবের পর যে যে রাস্তায় এসেছিলেন সে সে রাস্তায় যাওয়া হবে। তারপর ৪ ডিসেম্বর তার দেহভস্ম সান্তিয়াগোর সান্তা ইফজেনিয়া কবরস্থানে কবর দেওয়া হবে। এখন কিউবায় চলছে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে দেখানো ফিদেলের বিপ্লবী জীবনের ডুকুমেন্টারি ফিল্মগুলো। রাউল ক্যাস্ট্রো কঠিন নিষেধাজ্ঞায় কিউবায় সকল প্রকার নাচ, গান, উৎসব প্রকাশ করে এরকম কোনো কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
সূত্র : নিউজ অব নিউ ইয়র্ক, উইকিপিডিয়া। সম্পাদনা: আলাউদ্দিন