মাধ্যমিক শিক্ষার মান বাড়াতে ১৫ সুপারিশ
দেলওয়ার হোসাইন: মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার মান বাড়াতে ১৫টি সুপারিশ করেছেন দেশের শিক্ষাবিদরা। এর মধ্যে শারীরিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলাসহ কয়েকটি বিষয় পাবলিক পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত না রাখা, ২০১৯ সাল থেকে সব বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয় রয়েছে।
সম্প্রতি দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে দুদিনের এক কর্মশালায় এসব সুপারিশ উঠে এসেছে বলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে শিক্ষাবিদদের এসব সুপারিশ তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। এসব সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান তিনি। এ সময় বিশিষ্ট কয়েকজন শিক্ষাবিদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ২০১২ সালের কারিকুলাম পর্যালোচনা করতে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন। পাবলিক পরীক্ষার সময় চাপ কমাতে এসএসসি পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, খেলাধুলা, চারু ও কারুকলা, ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়গুলোকে পাবলিক পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত না করে এ বিষয়গুলো বিদ্যালয় পর্যায়ে সম্পূর্ণভাবে ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় আনা। এসব বিষয় স্কুল পর্যায়ে যথাযথভাবে পড়ানো এবং শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করতে কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবন। স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বই পড়ার জন্য কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ অন্তর্ভুক্ত করা। বছরের একটি দিনকে বইপড়া দিবস হিসেবে পালন করা। পাঠদানে শিক্ষকদের সহায়তায় উপযুক্ত শিক্ষক গাইডলাইন যথাসময়ে প্রণয়ন ও মানোন্নয়ন করা।
আরও সুপারিশ রয়েছে- এমসিকিউ ও সৃজনশীল প্রশ্নের মানোন্নয়নে আইটেম ব্যাংক (প্রশ্ন ব্যাংক) তৈরি করা। শিক্ষার্থীদের উত্তর লেখায় সহযোগিতা করতে প্রশ্নের সঙ্গে নমুনা কিছু উত্তর যাচাই-বাছাই করে সরবরাহ করা। যশোর শিক্ষা বোর্ড প্রাথমিকভাবে যে প্রশ্ন ব্যাংক তৈরি করেছে, তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আইটেম ব্যাংক প্রণয়নে ধারণাপত্র তৈরি করা। সব শিক্ষককে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নে আবশ্যিকভাবে সম্পৃক্ত করা। ২০১৯ সাল থেকে সব বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া। বিশ্বে প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের স্কোর-এর পরিবর্তে স্ট্যান্ডারাইজড স্কোর ব্যবহার। স্ট্যান্ডারাইজড স্কোর ব্যবহার করে ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে একটি পরীক্ষামূলক ফল তৈরি।
ফলাফল মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতিতে যাওয়ার আগে অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মী এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময় করা। নবম-দশম শ্রেণির নির্বাচিত কয়েকটি পাঠ্যবই পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য করতে শিক্ষাবিদ এবং লেখকদের নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি করা। এই প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শ্রেণি শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা। পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের জন্য টাইম বাউন্ড অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে, যাতে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারির আগেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক পৌঁছানো নিশ্চিত হয়। শিক্ষার মানোন্নয়নের অপরিহার্য শর্ত হিসেবে শিক্ষা বাজেট পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়ানো।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিষয়গুলোর কোনোভাবেই গুরুত্ব কমাচ্ছি না। এত বেশি বিষয় পাবলিক পরীক্ষায়, পরীক্ষায় বেশি সময় লাগে, ক্লাস কম হয়। এসব কারণে পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার জন্য এ বিষয়গুলোকে অন্য পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন করব, পাবলিক পরীক্ষার রুটিনের মধ্যে রাখার প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন, ২০১৯ সাল থেকে সব বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ এসেছে কর্মশালায়, যা ‘যথাসময়ে’ বাস্তবায়ন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, এখানে সাধ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এটাই শেষ কথা নয়।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ, লেখক ও অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মো. আক্তারুজ্জামান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন প্রমুখ। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম