বহনকারী বিমানের ইঞ্জিনের (লুব্রিকেন্ট) অয়েলের নাট-বোল্ট খোলা ছিল প্রধানমন্ত্রীর ফিরতি ফ্লাইটের প্রধান পাইলট নিয়েও তোপের মুখে বিমান প্রশাসন
বিপ্লব বিশ্বাস: প্রধানমন্ত্রীর ফিরতি ফ্লাইটের পাইলট নিয়েও তোলপাড় শুরু হয়েছে, এমনকি বিমানের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ফিরতি ফ্লাইটের প্রধান পাইলট নিয়েও তোপের মুখে পড়েছে বিমান প্রশাসন। অভিযোগ আছে, এই দুই পাইলটই বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এয়ারক্রাফটের (যে বিমানে প্রধানমন্ত্রী গেছেন) ট্রেনিংয়ে ফেল করেছিলেন। দ্বিতীয় দফায় বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা ও শর্ত শিথিল করে তাদের পাস করানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক এভিয়েশন আইন অনুযায়ী এ ধরনের ফেল করা পাইলটরা যেকোনো ভিভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অভিযোগ আছে, বিমানের যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সে তদন্ত কমিটির প্রধান ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীও এই এয়ারক্রাফটের ট্রেনিংয়ে ফেল করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনার জন্য বিমান কর্তৃপক্ষ ফিরতি ফ্লাইটে প্রধান পাইলট হিসেবে নির্বাচন করেছেন বিমানের চিফ অব টেকনিক্যাল ক্যাপ্টেন খাজাকে। এই খাজার বিরুদ্ধেও এয়ারক্রাফটের ট্রেনিংয়ে প্রথম দফায় ফেল করার অভিযোগ আছে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় ক্যাপ্টেন খাজাকে বিমানের পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু বি-৭৭৭-এ ফেল করার কারণে তাকে ওই দফায় ওই পদে দেওয়া হয়নি। কিন্তু বিমানের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এনামুল বারী দায়িত্ব নেওয়ার পর খাজাকে প্রথমত আইন ভঙ্গ করে চিফ অব টেকনিক্যাল করা হয়। পরবর্তীকালে তাকে বোয়িং-৭৭৭ এয়ারক্রাফটের ট্রেনিং পাইলটও (ইন্সট্রাক্টর) বানানো হয়। এখন তাকে হাঙ্গেরি থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফিরতি ফ্লাইট আনার জন্য প্রধান পাইলট হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বিমানজুড়ে তোলপাড় হলেও গত সোমবার রাত পর্যন্ত তাকে সিডিউল থেকে বাদ দেওয়া হয়নি।
বিমানের অপর একটি সূত্র জানায়, হাঙ্গেরি যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী এয়ারক্রাফট ‘রাঙা প্রভাতের’ ককপিট ক্রুদের মধ্যে এমন একজন পাইলটও ছিলেন যাকে সম্প্রতি একাধিক সিনিয়র পাইলটকে ডিঙিয়ে ইন্সট্রাক্টর বানানো হয়েছে। তিনি বাপার (বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশন) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টও ছিলেন। অভিযোগ আছে, বাপার একজন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে এই পাইলট ক্ষমতার অপব্যবহার করে বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজে ফেল করা (দুবারের চেষ্টায় পাস) দুজন পাইলটকেও সম্প্রতি ইন্সট্রাক্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানের ইঞ্জিনে অয়েল (লুব্রিকেন্ট) সিস্টেমের একটি নাট-বোল্ট অর্ধেক খোলা ছিল। ওই ঢিলা অংশ দিয়ে ইঞ্জিন থেকে লুব্রিকেন্ট বেরিয়ে যায়। এতে ওই ইঞ্জিনে জিরো হয়ে যায় অয়েল। যার কারণে বাধ্য হয়ে ফ্লাইটটির গতিপথ পরিবর্তন করে তুর্কমেনিস্তানের আসগাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে হয়। বিমানের ওই ফ্লাইটের (বিজি-১০১১) মেনটেনেন্স লগ বই থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী কোনো এয়ারক্রাফটে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়লে তা মেনটেনেন্স লগ বইতে এন্ট্রি করতে হয়। লগ বইতে আরও বলা হয়েছে, নাট-বোল্টটি টাইট করে দেওয়ার পর লুব্রিকেন্ট পড়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর নতুন করে লুব্রিকেন্ট ভরে এয়ারক্রাফটটি সচল করা হয়। এ ঘটনায় গত সোমবার বিমান, সিভিল এভিয়েশন ও মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান পরিচালক (প্রকৌশল) উইং কমান্ডার (অব.) আসাদুজ্জামানকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিলেও বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহম্মেদ বলেছেন, এখনো কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্পাদনা: শারমিন আজাদ