দুই কিশোরীসহ সলিমারা ৫ বোন গণধর্ষণের শিকার
উম্মুল ওয়ারা সুইটি, টেকনাফ থেকে : সলিমা বেগম, রেহেনা বেগম, মুমিনা বেগম, শাকিরা আর তসলিমারা পাঁচবোন। মিয়ানমার সেনাদের ভয়ে ছোট চারবোন এক ভাইসহ বড় বোনের বাড়িতে পালিয়ে ছিল। কিন্তু বিধি বাম। ওই বাড়িতেই হানা দেয় সেনার দল। স্বামীর সামনেই ছলিমা ও তার চার বোনের উপর একের পর এক নির্যাতন চালায় সেনারা। গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালায়।
এসব কথা বলতে গিয়ে রেহেনার গলা ধরে আসে। আর পারে না। পাশের দোভাষী শহীদুল জানালেন, ওরা বলতে চায় না। কিন্তু না বললে তো মানুষরা বুঝবে না- কি অমানবিক নির্যাতন হচ্ছে তাদের উপর।
গত সোমবার টেকনাফে অনিবন্ধিত লেদা ক্যাম্পে গিয়ে এই পাঁচ বোন ছাড়াও আরও ৪০ জন বিভিন্ন বয়সী নারীর সঙ্গে কথা হয়। মুখে তাদের কথা নেই, চোখ বলে দেয় কতটা কষ্ট হয়েছে কিশোরী এবং তরুণীদের। ছলিমা জানান, তারা সবাই মিয়ানমারের মংডু শহরের ছোট গরজিল, রাইম্য বিল ও রাইক্যং গ্রামের বাসিন্দা। রোহিঙ্গা নির্যাতনের শিকার ছলিমারা ৫জনসহ আরও ২০ জনের মতো একটি দল গত রোববার টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা শরণার্থী ক্যাম্পে এসে পৌঁছান। প্রায় কিশোরী দুই বোন সেনাদের অত্যাচারে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। লেদা ক্যাম্পের স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের জায়গা দিয়েছে এবং টুকটাক করে চিকিৎসা করাচ্ছে।
সলিমা বেগম এই প্রতিবেদককে জানান, সৈন্যদের অভিযানের মুখে পড়ে বড় ভাই দিল আহমেদ পালিয়ে গেছে। কিন্তু সে মারা গেছে নাকি জীবিত আছে তা আমি জানি না। এরকম নির্যাতন চলছে অবিরাম। সলিমা বলেন, অনেক গ্রামের বাড়িতে আগুনে পুড়িয়ে অনেক মানুষকে হত্যা করেছে তারা। তারা নারীদের ধর্ষণ, জবাই, আগুনে পুড়িয়ে ও গুলি করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করছে। মেঝ বোন রেহেনা বলেন, আমি ও ছোট তিনবোন এরমধ্যে দুইটা এখনো ‘মাইয়া ফোয়া হয়নাই’ (কিশোরী), সেনাদের ভয়ে বড় বোনের বাড়িতে গিয়ে পালিয়েছি। রক্ষা হয়নি। এক ভোরে মিয়ানমারের সৈন্যরা দুলাভাই-এর বাড়িতে ঢোকে। চার বোনকে একসাথে বেঁধে রাখে। তারপর দুলাভাইকে ঘরের বাইরে নিয়ে যায় এবং জবাই করে মেরে ফেলে।
তারপর চলে আমাদের উপর নির্যাতন। কান্নায় বুক ফেটে যায় বোনদের। চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে। এক ফোটা দুই ফোটা গড়িয়ে পড়ে। কত রাত ধরে নির্ঘুম তা তাদের চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। অনুপ্রবেশকারীরা বলেন, এখানে কড়া নজরদারির কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকতে পারছে না।
টেকনাফ লেদা ক্যাম্পের বাসিন্দা দেলোয়ার ও আসমত বলেন, রোহিঙ্গারা রাতে কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছেন। তবে এখন সীমান্তে আরও বেশি নজরদারি বাড়ায় রোহিঙ্গারা আগের মত ঢুকতে পারছে না।
মিয়ানমারের কয়োরিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নুর বাহার জানান, তার স্বামী দিলদার হোসেন একজন জেলে। মাছ শিকার করে তাদের পরিবারের সংসার চলে। তার চার ছেলে-মেয়ে রয়েছে। মিয়ানমারের সৈন্যরা বাড়িতে ঢুকে তাকে বের করে দিয়ে তার স্বামীকে ঘরে আটকে দেয়। পরে সৈন্যরাও বাইরে থেকে ঘরের চার পাশে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এইভাবে আমার স্বামীর মতো অনেককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বলেন, নাফ নদীর যেসব পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বেশি প্রবেশের চেষ্টা করছে সেসব পয়েন্টে বিজিবির নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে আরও বেশি সতর্ক রাখা হয়েছে। যাতে করে কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে। সম্পাদনা: শারমিন আজাদ