কক্সবাজার ও পার্বত্য জেলার সীমান্ত রোহিঙ্গাদের অভ্যয়ারণ্য
উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও ফরিদুল মোস্তফা খান, টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত ঘুরে : কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার সীমান্ত এলাকাগুলোয় বাংলাদেশের প্রকৃত নাগরিকদের চেয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে পৃথিবীর অনন্য সৌন্দর্য্যরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। রোহিঙ্গাদের এই অঞ্চল থেকে না সরালে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকি মুখে পড়বে। উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বললেন, এনজিওদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে
রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এখানে দিনে দিনে বাড়ছে। আমি মনে করি এখনই আমাদের সম্মিলিতভাবে এই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে। তাদের সংখ্যা চিহ্নিত করতে হবে। না হলে কক্সবাজার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। কারণ রোহিঙ্গাদের দিয়ে সন্ত্রাস এবং অপরাধ করানো সহজ। স্থানীয়দের দাবি, তারা যদি কখনো এক হয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বও হুমকির মুখে পড়বে।
এলাকার রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের ধারণা, মিয়ানমারে গত ৩০ বছর আগেও ৪০ লাখ রোহিঙ্গা ছিল। এই সময়কালে ১৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আর কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় এই সংখ্যা ১০ লাখের কম হবে না।
তাদের দেওয়া এসব হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নিবন্ধিত ক্যাম্প নোয়াপাড়া, কুতুপালংয়ে বৈধভাবে রয়েছে ২৭ হাজার রোহিঙ্গা। আর অনিবন্ধিত ক্যাম্প কুতুপালংয়ে গতকাল পর্যন্ত হিসাবে রোহিঙ্গা রয়েছে লক্ষাধিক। এরা আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। লেদা এবং নোয়াপাড়ায় রয়েছে আরো প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা। আর ১৯৭৮ থেকে সীমান্তে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে নাগরিক হয়েছে ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।
কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার সদর, বান্দরবানের লামা, আলী কদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, খাগড়াছড়ির বিশাল বনাঞ্চল, সাতকানিয়া, রাউজান এলাকায় ধীরে ধীরে বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে যোগসাজশে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব নিয়ে নিয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকে আসা রোহিঙ্গারা এখন এসব অঞ্চলের প্রভাবশালী মানুষ। বন আর পাহাড় কেটে তারা বসতি গড়েছে। চেহারা এবং গায়ের রঙে মিল থাকায় তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই। কক্সবাজার, হ্নীলা, উখিয়া, কুতুপালং, লেদা, কাটাখালীর স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, গত ৩০ বছরে পাহাড় কেটে রোহিঙ্গারা বাড়িঘর করে এখন বাংলাদেশেরই হয়ে গেছে। তবে বিদেশিদের সঙ্গে ওঠাবসা তাদের। তারা আমাদের থেকে বেশি টাকার মালিক। থাইক্যাং সীমান্তের বাড়িঘরগুলো দেখবেন সব পাহাড় কেটে করা। এখন তারা আমাদের সঙ্গে আত্মীয়তা করে সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করেছে।
হ্নীলা বাজারের এক দোকানদার হাফিজ জানান, ‘এখন ওই পারে গ-গোল হওয়ার কারণে আপনারা আইসছেন। কিন্তু প্রত্যেক দিনই দুগা দশগা (দুই-দশজন) করে রোহিঙ্গা ঢোকে। যারা ১৯৯১ সালে এখানে আসছে তারা আর কেউই ক্যাম্পে নাই। এলাকায় বিয়া-শাদী করে স্থায়ী বাসিন্দা হইছে। আর একই নাম দিয়ে ক্যাম্পে অন্য লোক থাকে।’ সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী