চার শতাধিক জনতা পুলিশ ও মিল কর্তৃপক্ষের ওপর হামলা চালায় গাইবান্ধায় সাঁওতাল পুলিশ সংঘর্ষে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিবেদন দাখিল
আনিসুর রহমান তপন: ৬ নভেম্বর সকালে রংপুর সুগার মিলের ইক্ষু মাড়াই কর্মসূচি উপলক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি)’র নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনকালে সকাল ১১টায় শ্যামল হেমরম (৩৫)সহ প্রায় চার শতাধিক জনতার একটি সংঘবদ্ধ দল পুলিশ ও সুগার মিল কর্তৃপক্ষের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। তীর-ধনুক নিয়ে হামলা করায় ৯ জন পুলিশ, ৩ জন জনসাধারণকে গুরুতর আহত হন। তাৎক্ষণিক জানমাল রক্ষার্থে ইউএনও’র নির্দেশে লাঠিটার্জ, সাউ-গ্রেনেড, রাবার বুলেটসহ রাইফেলের ১২ রাউ- গুলি এবং কাঁদানেগ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় নিরাপত্তা বাহিনী। এ ঘটনায় ৪ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ আসামী গ্রেপ্তার করতে চাইলে বিকেলে আবার প্রায় ৬’শতাধিক উচ্ছৃঙ্খল আদিবাসী ও বাঙ্গালী দুষ্কৃতিকারি একজোট হয়ে তীর-ধনুক নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় বলে ঘটনার প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন গাইবান্ধা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুস সামাদ। গাইবান্ধা জেলার রংপুর সুগার মিলের সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক খামারের জমি জোরপূর্বক দখল ও পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ শিরোনামে এই প্রতিবেদন জমা দেন। তিনি মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিবের কাছে ঘটনার প্রতিবেদন জমা দেন।
প্র্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় বসবাসরত ও ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কোনো অদিবাসীকে হয়রানি করা হবে না বলে আস্বস্ত করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পাঠানো প্রতিবেদনে রংপুর সুগার মিলের বাণিজ্যিক খামারের জমি জোরপূর্বক দখল এবং পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।
নৃ-গোষ্ঠির লোকজনের বাড়িতে বা তাদের ওপর কোনো মহল যাতে হামলা করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্থদের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ছয় টন খাদ্যশস্য এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তাদের পূণর্বাসনে ১০ একর খাস জমি চিহ্নিত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির উন্নয়ন কর্মসূচি তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে জানান, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৫৫ সালে মহিমাগঞ্জ এলাকায় রংপুর সুগার মিলের কাঁচামাল সংগ্রহের লক্ষ্যে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে স্থানীয় বাঙ্গালী ও সাওতাল জনগষ্ঠেীর কাছ থেকে প্রথমে এক হাজার ৮৪২ দশমিক ৩০ একর ও পরবর্তীতে ৭৮ দশমিক ৭৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। চিনি কলের লোকসান পুষিয়ে নিতে ২০০৪ সাল থেকে শর্ত সাপেক্ষে স্থানীয় জনগণের কাছে জমি লীজ দেয় চিনিকল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু লীজ গ্রহীতারা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় লীজ প্রথা বাতিল করে ২০১৫ সাল থেকে কর্তৃপক্ষ নিজেরাই আখ চাষ শুরু করে। এতে স্বার্থন্বেষী একটি মহল স্থানীয় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল আকন্দ বুলবুলকে সভাপতি ও শাহজাহান আলী নামক একজনকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে গঠন করে ‘সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ ৬ নভেম্বর সকালে রংপুর সুগার মিলের ইক্ষু মাড়াই কর্মসূচি উপলক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি)’র নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনকালে সকাল ১১টায় শ্যামল হেমরম (৩৫)সহ প্রায় চার শতাধিক জনতার একটি সংঘবদ্ধ দল পুলিশ ও সুগার মিল কর্তৃপক্ষের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। তীর-ধনুক নিয়ে হামলা করায় ৯ জন পুলিশ, ৩ জন জনসাধারণকে গুরুতর আহত হন। তাৎক্ষণিক জানমাল রক্ষার্থে ইউএনও’র নির্দেশে লাঠিটার্জ, সাউ-গ্রেনেড, রাবার বুলেটসহ রাইফেলের ১২ রাউ- গুলি এবং কাঁদানেগ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় নিরাপত্তা বাহিনী। এ ঘটনায় ৪ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ আসামী গ্রেফতার করতে চাইলে বিকেলে আবার প্রায় ৬’শতাধিক উচ্ছৃঙ্খল আদিবাসী ও বাঙ্গালী দুষ্কৃতিকারি একজোট হয়ে তীর-ধনুক নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে অবৈধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে এসময় পুলিশ বিভিন্ন পর্যায়ে গ্যাস সেল ৫০টি রেড বল ২২ রাউ-, রাবার বুলেট ২৬ রাউ-, শর্টগানের ৪৭৭ রাউ-, এসএমজি’র ৪১ রাউ- এবং রাইফেল দিয়ে ২০৫ রাউ- ফাঁকা গুলি করে। এতে উচ্ছৃঙ্খল দুষ্কৃতিকারিরা পিছু হটে। কিন্তু আদিবাসী ও বাঙ্গালী উচ্ছৃঙ্খল জনতার কার্যকলাপে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অদিবাসীদের অবৈধ স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
সংঘর্ষের এ ঘটনায় শ্যামল হেমব্রেমকে (৩৫) এক নম্বর আসামী করে মামলা দায়ের করা হলেও ৭ নভেম্বর আসামী হেমব্রেম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। একই দিন অধিগ্রগণ করা জমি থেকে আনুমানিক ৪০০ গজ পশ্চিমে মাদারপুরস্থ সুগারমিলের জমিতে মঙ্গল মার্ডি (৫০) নামক এক নৃ-গোষ্ঠির মৃতদেহ পাওয়া যায়। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী