নারায়ণগঞ্জ সিটির ৭০ হাজার নতুন ভোটারেই নির্ধারণ হবে জয়-পরাজয়!
হাসান আরিফ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে নতুন ভোটারদের উপর জয়-পরাজয় অনেকটাই নির্ভর করবে। নতুন ভোটারের ভাবনায়ও এখন ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নাসিক নির্বাচন; যারা গড়ে দিতে পারেন প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে পার্থক্য। বিশিষ্ট নাগরিক, প্রার্থী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই তাদের নির্বাচনি কৌশল নির্ধারণ করছেন।
নাসিক এলাকায় মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬২ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯ জন। এর আগে ২০১১ সালের নির্বাচনে ভোটার ছিল ৪ লাখ ৪ হাজার ১৮৯ জন। ওই হিসেবে নতুন ভোটার বেড়ে হয়েছে ৭০ হাজার ৭৪২ জন, অর্থাৎ প্রায় ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে মূল শহরে প্রায় ২৪ হাজার, সিদ্ধিরগঞ্জে প্রায় ৩২ হাজার এবং বন্দরে ১৬ হাজার নতুন ভোটার হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে সিটি কর্পোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরুর পর এটি দ্বিতীয় ভোট। তবে দলীয় প্রতীকে ভোট হবে এবারই প্রথম। গেল নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দুই নেতা সেলিনা হায়াৎ আইভী ও এ কে এম শামীম ওসমান প্রার্থী হয়েছিলেন। ২০১১ সালে নির্দলীয় ওই নির্বাচনে শামীম ওসমানকে ১ লাখের বেশি ভোটে হারিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র হন বিলুপ্ত পৌরসভার মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। একজন মেয়রের সঙ্গে ২৭টি সাধারণ ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদেও ভোট হবে।
আইভীর সমর্থকরা বলছেন, গত নির্বাচনের মতো এবারও অটুট রয়েছে মেয়র আইভীর ভোট ব্যাংক। আর এই ভোট ব্যাংকে রয়েছে প্রায় দেড় লাখ ভোট। এই ভোটারদের বাস মূল শহরের ছয়টি ওয়ার্ডে। এই ছয়টি ওয়ার্ড হলো- ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ এবং ১৮নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডগুলোর ভোটাররা এবারও মেয়র আইভীর পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। সারা সিটি কর্পোরেশন এলাকার অন্য সব ওয়ার্ডে যদি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইও হয় তারপরও এই ছয়টি ওয়ার্ডে আইভী একচেটিয়া ভোট পাবেন বলেই আশা করছেন তার নির্বাচনি টিম।
এই ছয়টি ওয়ার্ডে যারা বিএনপির ভোটার হিসাবে পরিচিত তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এই নির্বাচনকে দেখছেন একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হিসাবে। আর তাদের মাঝে বেশ বড় আকারে আঞ্চলিকতাও রয়েছে।
এ বিষয়ে দেওভোগ এলাকার একজন পরিচিত বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেয়র আইভী আমাদের দেওভোগবাসীর গর্ব। আমরা মনে করি যেহেতু এই নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হচ্ছে না, তাই দেওভোগের মান বাঁচাতেই মেয়র হিসাবে আইভীকে প্রয়োজন। এছাড়া আইভী নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়নে যে সব প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তার মাঝে অন্যতম হলো জিমখানা লেক আর বাবুরাইল খালের উন্নয়ন প্রকল্প। তাই এই প্রকল্প দুটি এগিয়ে নিতে হলেও আরও একবার অন্তত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আইভীকেই করতে হবে। তাছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্যও তাকেই দরকার।
গত নির্বাচনেও এই ছয়টি ওয়ার্ডে একচেটিয়া ভোট পেয়েছিলেন মেয়র আইভী। তাই এবারও এই ভোট ব্যাংকই মেয়র পদে আইভীকে অনেকদূর এগিয়ে দেবে বলে আইভী সমর্থকদের ধারণা। সম্পাদনা: মাহমুদুল আলম