প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিশেষ বিমান কিনে লাভ হবে না যারা দায়িত্বে আছেন তাদের ত্রুটি সারাতে হবে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য নতুন ও বিশেষ উড়োজাহাজ কেনার কথা জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী। তবে এ ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহ নেই প্রধানমন্ত্রীর ও তার কার্যালয়ের। কারণ তারা মনে করছেন নতুন বিমান কিনে কি হবে? যে বিমানে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল, জরুরি অবতরণ করাতে হয়েছিল। সেটি নতুন উড়োজাহাজ। বোয়িংয়ের কাছ থেকে সেটি কেনা হয়েছে এখন এক বছরও হয়নি ফ্লিটে এসেছে। ওই উড়োজাহাজটিতে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ত্রুটি দেখা দেওযার ঘটনায় মূল সমস্যা চিহ্নিত না করে, এখনই প্রধানমন্ত্রীর জন্য নতুন করে বিমান কেনার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য নতুন বিমান কেনা হলে যাত্রীদের মধ্যে বিমানে ভ্রমণ করা নিয়েও সংশয় তৈরি হতে পারে। এই সব বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন বলেন, এই বিমানটি নতুন ছিল। সেখানে সমস্যা হয়েছে। এখন নতুন বিমান কিনেই যে আর দুর্ঘটনা ঘটবে না এমন নিশ্চয়তা কোথায়? নতুন বিমান কেনার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, কেন এই ঘটনাটি ঘটেছে, সেটা বের করা ও দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া। এখনও পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে বিমানের দায়িত্বে অবহলোর জন্য কাউকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা এই ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সূত্র জানায়, এখনও এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হবে প্রধানমন্ত্রী ফিরে আসার পর। তার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। তাছাড়া এই ঘটনায় বিমানের তদন্ত প্রতিবেদন ১ ডিসেম্বর জমা হওয়ার কথা রয়েছে। এই রিপোর্টে কি আসে তা দেখতে হবে। তদন্ত রিপোর্ট জমা হওয়ার আগে বরখাস্ত করা হচ্ছে না।
২৭ নভেম্বর রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় হাঙ্গেরিতে পৌঁছান। তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রাঙ্গা প্রভাত নামের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর উড়োজাহাজটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চার ঘণ্টা তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অপেক্ষা করেন। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী সেখানের ভিআইপি লাউঞ্জে অপেক্ষা করেন। তাকে অনাকাক্সিক্ষতভাবেই ওই বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতি করতে হয়েছে। তবে উড়োজাহাজটির ত্রুটি সারানোর পর সেটি তাকে নিয়ে আবার হাঙ্গেরির উদ্দেশ্যে তুর্কমেনিস্তান থেকে যাত্রা শুরু করে।
বিমানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই উড়োজাহাজে ইঞ্জিনে ফুয়েলের প্রেসার কমে গিয়েছিল। প্রেসার কমে যাওয়ার কারণে ইঞ্জিনে প্রয়োজনীয় ফুয়েল প্রবাহ অব্যাহত না থাকায় ত্রুটি দেয়। এই বিষয়টি বিমান কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ওই সময়ে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে মন্ত্রণালয়। এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজ রাঙ্গা প্রভাত সোমবার দেশে ফিরে এসেছে। সেটি দেশে ফিরে আসার পর ওই বিমানে যারা কর্তব্যরত ছিলেন এর মধ্যে যারা এখন বাংলাদেশে রয়েছেন তাদের পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্ত কমিটি। উড়োজাহাজের পাইলট, কো-পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার, কারিগরি বিশেষজ্ঞ যারা ছিলেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ঘটনার সাক্ষী হিসেবে ওই ফ্লাইটে কর্তব্যরত অন্যান্যদেরও ডেকে জানতে চ্ইাছে তদন্ত কমিটি। জানা গেছে, ওই উড়োজাহাজের যাত্রী ছিলেন ৯৯ জন। পাইলট ও ক্রুসহ অন্যান্যরা ছিলেন ২৯ জন।
সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি বেশ কয়েকটি দিক সামনে রেখে তদন্ত করছে। তারা দেখছে কি কারণে উড়োজাহাজে ইঞ্জিনে ফুয়েলে প্রেসার কমে গিয়েছিল, এর পাশাপাশি অন্য কোনো ত্রুটি দেখা দিয়েছিল কিনা এবং কেন দেখা দিয়েছিল। এই ঘটনার পেছনে কারও গাফিলতি আছে কিনা, থাকলে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। যারা বিমানটি ফ্লাইটে যাওয়ার জন্য ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে তাদের কাছ থেকেও ঘটনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি এ ব্যাপারে কাদের দায়িত্বে গাফিলতি রয়েছে তাও বের করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি আগামী দিনে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারেও কমিটি সুপারিশ করবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, দোষীদের ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই জন্য কম সময়ের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট দিলে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।