শিল্পী ও কলাকুশলীরা দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ
মোয়াজ্জেম হোসেন: তারকাদের জমকালো উপস্থিতিতে সকাল থেকেই মুখরিত ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। পর্দায় নিজেদের শৈল্পিক ও ঝলমলে উপস্থিতির মধ্য দিয়ে যারা এদেশের বিনোদন পিপাসুদের মনোরঞ্জন করে আসছিলেন তারাই এবার রাজপথে নেমেছেন নিজেদের অধিকার আদায় ও মর্যাদা রক্ষায়। টেলিভিশনের শিল্পী ও কলাকুশলীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)’-এর ব্যানারে সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরার পাশাপাশি নিজেদের পেশাগত জীবনের নানা প্রতিকূলতার কথা তুলে ধরেন টেলিভিশন শিল্পী ও কলাকুশলীদের এই সংগঠন।
দিনব্যাপী এক সমাবেশের মাধ্যমে গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন ১৩টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘এফটিপিও’। দফাগুলো হলোÑ ‘দেশের বেসরকারী চ্যানেলে বাংলায় ডাবিকৃত বিদেশি সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ করতে হবে,’ টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ ক্রয় ও প্রচারের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট বা এজেন্সির হস্তক্ষেপ ব্যতীত চ্যানেলের অনুষ্ঠানসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে,’ টেলিভিশন শিল্পের সর্বক্ষেত্রে এআইটির ন্যূনতম ও যৌক্তিক হার পুন:নির্ধারণ করতে হবে,’ দেশের টেলিভিশন শিল্পে বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলীদের অবৈধভাবে কাজ করা বন্ধ করতে হবে,’ বিশেষ প্রয়োজনে কাজ করতে হলে সরকারের অনুমতি এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনসমূহে নিবন্ধিত হতে হবে ও ডাউন লিংক চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে হবে ।’
এফটিপিওর অন্তর্ভুক্ত সংগঠনগুলো হলো- টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ, সহকারী পরিচালক সমিতি, শ্যুটিং হাউজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, ডিরেক্টরস গিল্ড, টেলিভিশন লাইট হাউজ অ্যাসোসিয়েশস, অভিনয় শিল্পী সংঘ, প্রযোজনা ব্যবস্থাপক সমিতি, টেলিভিশন মেকাপ আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, অডিও ভিজ্যুয়াল টেকনিক্যাল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, টেলিভিশন লাইট ক্রু অ্যাসোসিয়েশন ও টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ।
‘শিল্পে বাঁচি, শিল্প বাঁচাই’ শীর্ষক দিনব্যাপী এ সমাবেশের শুরুতেই মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এফটিপিওর অন্তর্ভুক্ত ১৩টি সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহবাহক মামুনুর রশীদ। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবশন করে শিল্পী ও কলাকুশলীরা। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর প্রয়াত শিল্পী ও কলাকুশলীদের নাম ঘোষণা করার পাশাপাশি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করে সংগঠনটি।
এফটিপিওর দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে চ্যানেল আইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, প্রথম দিনেই আমরা শিল্পীদের পাশে ছিলাম, আজও আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। সকল শিল্পীর সুখে-দু:খে চ্যানেল আই সবসময়ই আছে। আমরা এক দফা দাবি কিংবা পাঁচ দফা দাবি যাই হোক না কেন আপনাদের সাথে আছি। এমনকি ১০০ দফা দাবি থাকলেও আপনাদের সাথে থাকব।’
নাট্যকার সংঘ’র উপদেষ্টা আফজাল হোসেন বলেন, বলার কিছুই নেই, আমি মনে করি শিল্পী ও কলাকুশলীদের যথেষ্ট সম্মান পাওয়া উচিত। আমাদের সকল শিল্পী ও কলাকুশলীদের উপযুক্ত সম্মান দিলেই দাবি আদায় হবে বলে আমি মনে করি।’
এফটিপিওর আহবায়ক মামুনুর রশীদ বলেন, একটা ঐক্যের প্রয়োজন আছে বলেই আজ আমরা সমবেত হয়েছি। শিল্পী ও কলাকুশলীদের ব্যাপক উপস্থিতি আমাদের নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। সকল অব্যবস্থাপনা, অসঙ্গতি ও ইস্যুগুলোকে তুলে ধরতেই আমরা শিল্পী ও কলাকুশলীরা এখানে সমবেত হয়েছি। এফটিপিওর ব্যনারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা একসাথে কাজ করতে চাই।
সদস্য সচিব গাজী রাকায়েত বলেন, আমি মনে করি আমাদের এ সমাবেশটা সফল হয়েছে। দাবিকৃত বিদেশি সিরিয়াল বাদ দিতে হবে। এফটিপিওর সকল দাবির কথা আমরা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে তুলে ধরেছি এবং ইতোমধ্যে তিনি আমাদের দাবির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন। ভবিষ্যতে দরকার হলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে বড় পরিসরে ঐক্যবদ্ধ হব।
শিল্পী ও কলাকুশলীদের পক্ষে এসময় আরও বক্তৃতা করেন অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, খায়রুল আলম সবুজ, তারিক আনাম খান, শঙ্কর সাঁওজাল, শহীদুজ্জামান সেলিম, তৌকির আহমেদ, বিপাশা হায়াত, বন্যা মির্জা, তাজিন আহমেদ, মোশাররফ করিম, মিশু সাব্বির, এফএস নাঈম, রোকেয়া প্রাচী, মাসুম রেজা প্রমুখ।
দিনব্যাপী এ সমাবেশে বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে সঙ্গীত পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তিতে আয়োজনকে মনোমুগ্ধকর করে রাখেন শিল্পী ও কলাকুশলীরা। সম্পাদনা: আলাউদ্দিন