মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন আরসিবিসি’র কাছ থেকেই সাড়ে ৬ কোটি ডলার আদায় করা হবে:আইনমন্ত্রী
শারমিন আজাদ: আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক-আরসিবিসি’র কাছ থেকেই রিজার্ভ চুরির বাকি সাড়ে ৬ কোটি ডলার আদায় করা হবে। ব্যাংকটিকেই এ টাকা ফেরতের দায় নিতে হবে বলেছেন আইনমন্ত্রী। এ নিয়ে ফিল্পাইনের সিনেটে আরেকটি শুনানির দিন ধার্য করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ফিলিপাইনের ম্যানিলা সফর শেষে রিজার্ভ চুরির বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি এসময় আরও বলেন, ফিলিপিন্স সরকার আমাদের হয়েই সেখানে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এটার আরেকটা কারণ হচ্ছে এখানে ফিলিপিন্সের ক্রেডিবিলিটি ও তাদের ফাইন্যান্সিশিয়াল ইনস্টিটিউশনের ক্রেডিবিলিটি জড়িত। তিনি বলেন,আজকের পৃথিবীতে অ্যান্টি মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা প্রয়োগ করার ব্যাপারেও সকল রাষ্ট্র অত্যন্ত সচেতন। ফিলিপাইনের সিনেটের সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তার নেতৃত্বে যাওয়া প্রতিনিধিদল। সেসময় আরসিবিসির যে দায় সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিনেট হিয়ারিংয়ে অনেকেরই বক্তব্য ছিলো, আরসিবিসিই হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ পাচারের জন্য দায়ী। সেজন্য বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের বক্তব্য ছিলো যাতে আবার একটা শুনানি হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও ফিলিপিনের সিনেটের কাছে অনুরোধ ছিলো যাতে আরেকটি শুনানি হয়। তৎক্ষণাৎ সিনেটের সভাপতি এ অনুরোধ গ্রহণ করেন এবং আরেকটি শুনানির তারিখ ঠিক করার নির্দেশ দেন। এর মাধ্যমে রিজার্ভ চুরির টাকা ফেরত দিতে ফিলিপিন সিনেটের সদিচ্ছা প্রকাশ পায় বলে মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী। চুরির অর্থ আদায়ে লড়ে যাবে ফিলিপিন সরকার, জানিয়েছেন তিনি। ফিলিপাইনে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত দিতে বাংলাদেশের যত প্রকারের সহযোগিতা প্রয়োজন ফিলিপাইন সরকার তা করবেন। এসময় বাংলাদেশ এবং ফিলিপিনসের বন্ধুত্ব অত্যন্ত গাঢ় বলেও উল্লেখ করেন ফিলিপাইন সরকার। তিনি বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত বিষয়ে আলোচনায় ফিলিপাইন সরকারের আগ্রহ এবং সদিচ্ছা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ফিলিপাইন সরকার চায় না অন্যায়ভাবে কেউ লাভবান হোক এবং কারো অর্জিত আয়ের অর্থ অন্যায়ভাবে অন্য কেউ রেখে দিক। ফিলিপিন সরকার তা হতে দেবে না।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল দেখা করেন সিনেট সভাপতির সঙ্গে। এসময় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন, সংসদীয় কমিটির সভাপতি ডক্টর মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক,অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, গভর্নর ফজলে কবির এবং ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স ডিভিশনের সচিব। সেদিনই সকাল ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কথা হয় সিনেটের সভাপতির সঙ্গে। সেদিনই আড়াইটায় ফিলিপিনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা থাকলেও তা বাতিল হয়। রাষ্ট্রপতি ম্যানিলা ছেড়ে দাবাও প্রদেশে যাওয়ার কারণে বাতিল হয় সেই সাক্ষাৎ। পরেরদিন ফিলিপিনের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে একই দাবি উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রীসহ প্রতিনিধিদল। সেখানে তারা বলেন, আরসিবিসি যেহেতু তার অপরাধ মেনে নিয়েছে এবং জরিমানার টাকাও গুনেছে তাই আরসিবিসিকেই পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে। ফিলিপিনের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা যুক্তিসঙ্গত দাবি। সেখান থেকে বাংলাদেশ গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছে যে, আইনি ও প্রশাসনিক চাপ দিয়ে এ টাকা আদায়ে লড়বে ফিলিপিন সরকার এবং সেদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়। মামলার ব্যাপারেও খোলাখুলি কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। সেখানেও তারা বলেন, চুরির টাকা আরসিবিসিকে ফেরত দিতেই হবে।
তবে চুরির টাকা ফেরতের ব্যাপারে নিউইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। রিজার্ভ চুরির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া প্রতিবেদন নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, চুরির টাকা আদায় হওয়াটাই প্রথম লক্ষ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের কে কে চুরির সঙ্গে জড়িত তা জানা এখন জরুরি নয়। তবে এ বিষয়ে এখনো তার পরামর্শ চাওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু