অবৈধ বাংলাদেশিদের বিতাড়িত করতে আসামে অভিযান
আসাদুজ্জামান আকাশ: অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ভারতের আসাম থেকে বের করার জন্য অভিযান শুরু করেছে রাজ্য সরকার। ‘ডিটেক্ট, ডিলেট, ডিপোর্ট’ এই তিন নামে অভিযান চালিয়ে অবৈধ বাংলাদেশিদের বিতাড়িত করা হবে বলে জানানো হয়েছে। অভিবাসীদের ভারত থেকে বের করার বিষয়টি আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে দেশটির বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয় লাভের পর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশিরা ভারতে আসার জন্য দেশটির জনসংখ্যা বিষয়ক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। যার ফলে, দেশটিতে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
১৯৮৫ সালে স্বাক্ষরিত আসাম চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ১৯৬৬ সালের ১লা জানুয়ারির পর থেকে ২৪শে মার্চ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যে বাংলাদেশি অভিবাসীরা আসামে প্রবেশ করেছে তাদেরকে শনাক্ত করা হবে ও তাদের নাম নির্বাচনি তালিকা থেকে আগামী ১০ বছরের জন্য মুছে ফেলা হবে। এই সময় সীমার পরে যারা আসামে প্রবেশ করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে। তবে এই সব চুক্তির অধিকাংশ শুধু কাগজেই রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত এইগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশি অভিবাসীদের ভারত থেকে বের করার প্রথম ধাপ হচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করা। এই কাজটি বিশাল কঠিন বলে জানান তারা। বিষয়টিকে আরও কঠিন করে তুলেছে আসামের রাজনীতিবিদরা। কারণ তারা অভিবাসীদের ভোট ব্যাংক হিসেবে দেখেন বলে জানা যায়। অভিবাসীদের অধিকাংশের কাছে বৈধ বা অবৈধ ভারতীয় পরিচয়পত্রের কাগজ আছে। এমনকি অনেকে নির্বাচনে ভোট পর্যন্ত দিয়েছেন। তাই তাদের শনাক্ত করা আরও কঠিন হয়ে গেছে বলে বলা হয় প্রতিবেদনে।
অভিবাসী নির্মূলে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা সমুজ্জল ভট্টাচার্য ওয়াশিংটন পোস্টকে সম্প্রতি জানিয়েছেন, আমাদের ‘ডিটেক্ট, ডিলেট, ডিপোর্ট ’ এই আন্দোলনটি এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অভিবাসী ছাড়াও বাংলাদেশের ইসলামী চরমপন্থী দলগুলো তাদের লোক পাঠাচ্ছে ভারতে।
ভারতের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন কমিটি দেশটির প্রত্যেক নাগরিকের তালিকা করার কাজটি করেন। তারা বলছেন, তাদের কাছে ভারতের নতুন নাগরিক হওয়ার জন্য প্রচুর আবেদন যাচ্ছে। তাই অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ও জালিয়াতি এড়াতে, তারা আবেদনকারীদের আগের দুই প্রজন্মের পরিচয় দাবি করছে। যার ফলে অভিবাসীরা জালিয়াতি করার সুযোগ পাচ্ছে না বলে জানান তারা।
নাগরিক নিবন্ধন কমিটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জালিয়াতি ধরার এটিই তাদের মুখ্যম অস্ত্র। বিষয়টি নিয়ে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে বলেও জানান তিনি। এটি তাদের কাছে আগুনের একটি নদীর মতো, যার মধ্যে ইচ্ছে না থাকলেও সাঁতার কাটতে হবে তাদের, অভিবাসী নির্মূল প্রকল্পটির গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই এ কথা বলেন তিনি।
তবে তারপরও একটি বড় প্রশ্ন থেকে যায়। চিহ্নিত করার পর কোথায় ফেরত পাঠানো হবে এই অভিবাসীদের, বাংলাদেশে?
সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ