স্থূলতা কমাতে লাগবে পরিশ্রমজাত ঘাম, ক্লান্তি
রিকু আমির: স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গোটা বিশ্বের অবস্থা একই। এজন্য বৃদ্ধি পাচ্ছে- ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ নানা অসংক্রামক ব্যাধি।
প্রখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছেন, বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ মোটা হয়ে যাওয়ায় জীবন ঝুঁকিতে আছে। এ ধরনের স্থূলতা শুধু ক্যান্সার নয় মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগে আক্রান্ত করা ছাড়াও অন্যান্য রোগে মানুষকে ভোগায়। অথচ ব্যায়াম ও পরিমিত আহার গ্রহণের মধ্যে দিয়ে স্থূলতা কমিয়ে আনা যায়। এজন্য কোনো রকেট সাইন্সের প্রয়োজন পড়ে না। দ্য ডেইলি আওয়ার টাইমের প্রশ্নে ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোডস্থ ডায়মন্ড মাল্টি জিমের সত্বাধিকারী ও প্রধান প্রশিক্ষক দিলদার হোসেন দিলু বলেন, পরিশ্রমকে নিজের মতো করে ভাবলে হবে না। অনেকেই বলে থাকেন- তিনি প্রচুর হাঁটেন। এটা বলে বোঝাতে চান, তিনি প্রচুর পরিশ্রম করেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। হাঁটায় প্রয়োজনীয় পরিশ্রম হয় না। হাঁটায় ওজন কমবে না। ওজন কমাতে পারে কার্ডিয়াক ব্যায়াম, যেমন- সাইক্লিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদি।
রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান দ্য ডেইলি আওয়ার টাইমের প্রশ্নে বলেন, হাঁটায় পরিশ্রম হয় ঠিকই। কিন্তু জোরে হাঁটতে হবে কমপক্ষে ১০ মিনিট। এটা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত। হাঁটা প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, অনেকে ঘরেও হাঁটেন। কিন্তু এটা তো সঠিক পন্থার হাঁটার মধ্যে পড়ে না।
তিনি বলেন, কাজ করছি মানেই যে পরিশ্রম করছি, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। কাজে কাজে অনেক পার্থক্য আছে। ঘরে নারীরা সারাদিনই এটা-সেটা করছে। কিন্তু তাই বলে সেটা পরিশ্রম-কায়িক শ্রমের মধ্যে পড়ে না। ঘরোয়া কাজের মধ্যে সঠিক পরিশ্রমের সুযোগ আছে কি-না প্রশ্নে তিনি বলেন, পাটায় মশলা পিষা, ঘরমোছা, সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করা যেতে পারে। তবে এসব কাজ অবশ্যই কমপক্ষে একটানা ১০ মিনিট করতে হবে।
দিলদার হোসেন দিলু বলেন, অতিরিক্ত ওজন কমাতে শুধু খাবার কমিয়ে দিলেই হবে না। খেয়াল রাখতে হবে, খাদ্যের ৬টি উপাদানের মধ্যে যে উপাদান দেহের ওজন বাড়িয়ে দেয়, দেহে চর্বি বৃদ্ধি করে, সেসব খাওয়া হচ্ছে কি-না। এখন দেখা গেল- তিন বেলা ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু আলু ভর্তা খাওয়া শুরু করলাম বা বৃদ্ধি করলাম, তাহলে কীভাবে হবে। এই আলুই তো চর্বি, ওজন বাড়াবে। সুতরাং খাবারের উপাদান সম্পর্কে, কোনটার কী কাজ জেনে সে অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি।
রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত ওজন, স্থূলতা, অতিস্থূলতা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আছে। কিন্তু ঘরে খাবারের আইটেম বেশি থাকে। না খেয়ে পারে না। এটা একটা সমস্যাই। এছাড়া মানুষ চায় ব্যয়াম করতে। কিন্তু সেভাবে জায়গা পায় না। হাঁটার জায়গা নেই। ফুটপাথের অবস্থা করুণ, রিকশার সংখ্যা খুবই বেশি। একসময় মানুষ ছোটখাট যাতায়াত হেঁটে করত, এখন সেটা করা হচ্ছে রিকশায় চেপে।
তিনি বলেন, ওজন কমাতে কায়িক পরিশ্রমের পাশাপাশি শর্করা, চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ খুবই কমিয়ে বা বর্জনের দিকে যেতে হবে।
কাজ করার পর শরীরে কী হলে বোঝা যাবে যে, পরিশ্রম করা হয়েছে- জানতে চাইলে ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, শরীর ঘামবে, ক্লান্ত অনুভব হবে, দুর্বল লাগবে। কেউ কেউ বসে থাকলেও কিন্তু ঘামে, ক্লান্ত অনুভব বা দুর্বল বোধ করে। এটা ভিন্ন বিষয়। এটা কোনো দৈহিক পরিশ্রম থেকে নয়, এটা হরমোনজনিত সমস্যা বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থেকে হতে পারে। অনেকটা একই ধরনের কথা বলেন, দিলদার হোসেন দিলুও। সম্পাদনা: শাহানুজ্জামান টিটু