৫৪টি দেশের অংশগ্রহণে শুরু হলো এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী
ডেক্স রিপোর্ট: দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা চারুশিল্পীদের অংশগ্রহণে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার চারুকলা বিষয়ক অন্যতম বৃহৎ প্রদর্শনী এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী।
স্বাগতিক বাংলাদেশসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৫৪টি দেশ এ প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর বিশিষ্ট শিল্পীদের অংশগ্রহণে এ প্রদর্শনী ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করে। এবার তার সপ্তদশ আয়োজন। গতকাল সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, “এ উৎসবটি আমাদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক গ-ি পেরিয়ে শিল্পকলাকে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেবে।”
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সহস্রাব্দ প্রাচীন। আমরা আমাদের আবহমান এ সংস্কৃতিকে পৃথিবীব্যাপি ছড়িয়ে দিতে চাই।”
বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের ছবির মধ্যদিয়ে বৈশ্বিক শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার পাশাপাশি নিবিড় সাংস্কৃতিক যোগাযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও সপ্তদশ দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০১৬ সাংগঠনিক কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী লিয়াকত আলী লাকী। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি সচিব আখতারী মমতাজ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, উত্তর কোরিয়ার সংস্কৃতিবিষয়ক উপমন্ত্রী ইয়ং চোল এবং থাইল্যান্ডের উপমন্ত্রী চাওরো কাসিতসুন অরং ত্রন।
প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের ১৪৮ জন শিল্পীর ১৫৪টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ৫৪জন আমন্ত্রিত চিত্রশিল্পীর ৫৪টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পাচ্ছে।
অন্যদিকে প্রদর্শনীতে স্থান পাচ্ছে ৫৩টি দেশের ১৫০ জন শিল্পীর ২৬০টি শিল্পকর্ম। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো থেকে শিল্পী, শিল্প সমালোচক, মিউজিয়াম কিউরেটরসহ মোট ১৪৫ জন এ প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন।
এবারের আসরের জুরিবোর্ডের প্রধান শিল্পী রফিকুন নবী এবারের চারুকলা প্রদর্শনীর শিল্পকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের সময় জানান, বিদেশি ছবিগুলো যথাযথভাবে ‘কিউরেট’ করা হয়নি’। তবে বাংলাদেশি শিল্পীদের কাজগুলো নিয়ে জুরিবোর্ডের বিদেশি সদস্যরা ‘ভুয়সী প্রশংসা’ করেন।
পরে তিনি আসরের বিশেষ পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন। জুরিদের বিচারে ‘অনারেবল ম্যানশন’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কুন্তল বাড়ৈ, বিপাশা হায়াত, রাজিব কুমার রায়, শ্যামল চন্দ্র সরকার, দিলীপ কুমার কর্মকার। ‘গ্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন কামরুজ্জামান স্বাধীন, হারুনুর রশীদ ও চিলির ডাগমারা হুইসক্যাল।
এবারের উৎসবে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিল্পীরা অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
এবারের আসরে এশীয় প্রশান্তমহাসাগরীয় ও অন্যান্য দেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের মধ্যে থেকে চীনের ওয়াং চুনচেন, ফ্রান্সের মায়েলো ডাউণ্ট, ইন্দোনেশিয়ার দোলোরোসা সিংহা, জাপানের ইয়োকো হাসেগাওয়া, পোল্যান্ডের জাইমুন্ট রাফাল স্ট্রিরেন্ট এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ইউন জিনসুপ- এর মতো চারুশিল্পীরা অংশ নিচ্ছেন।
আয়োজনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রোসেসিং জোনে আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হবে।
আর্টক্যাম্পে অংশগ্রহণকারীরা হলেন- বাংলাদেশের শিল্পী ড. ফরিদা জামান, হাশেম খান, মাহমুদুল হক, মনিরুল ইসলাম, নাইমা হক, নাজলি লাইলা মনসুর, রফিকুন নবী, রোকেয়া সুলতানা ও সমরজিৎ রায় চৌধুরী এবং চায়না, ইন্ডিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলংকার শিল্পীরা।
প্রদর্শনীর পাশাপাশি দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে পারফরমেন্স আর্ট প্রদর্শিত হবে। বাংলাদেশের ১২জন শিল্পী এ পারফরমেন্স আর্ট প্রদর্শন করবেন।
প্রদর্শনীকে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য জাতীয় প্রেস ক্লাবের কদম ফোয়ারা থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এবং ঢাকা শহরের বিভিন্নস্থান আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে।
মাসব্যাপি এ প্রদর্শনী ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সম্পাদনা: সাইদ রিপন