রসরাজের মুক্তি দাবি পরিবারের
ইসমাঈল হুসাইন ইমু: ফেসবুকে ‘ধর্মীয় অবমাননার’ অভিযোগে গ্রেফতার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের জেলে রসরাজকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তার মা নমিতা রানী দাস। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন দাবি করেন।
এ সময় রসরাজকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে তিনি বলেন, রসরাজ লেখাপড়া জানে না, তার পক্ষে ফেসবুকে কোনো কিছু লেখাও সম্ভব না। ‘ইসলাম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির ও হিন্দুদের শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এর কয়েকদিন আগে হরিণবেড় গ্রামের ৩০ বছর বয়সী রসরাজ দাসের ফেসবুক পাতায় ‘ইসলাম অবমাননার’ ছবি পোস্ট করার অভিযোগ উঠলে পুলিশ তাকে আটক করে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার পর থেকেই সে কারাগারে।
লেখাপড়া না জানা মাছ বিক্রেতা রসরাজের পক্ষে ‘অবমাননাকর’ ছবি তৈরি করে ফেসবুকে পোস্ট করা সম্ভব কিনা সে বিষয়টি তখনই আলোচনায় আসে। তদন্তের নামে পুলিশ ওই ছবি পোস্ট করার অভিযোগে স্থানীয় এক সাইবার ক্যাফের মালিক জাহাঙ্গীর আলমকেও গ্রেফতার করে। এরপর গত ২৯ নভেম্বর ব্রাহ্মবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, জাহাঙ্গীর আলম হরিণবেড় বাজারের আল আমিন সাইবার ক্যাফের স্বত্বাধিকারী। পুলিশের ধারণা, জাহাঙ্গীরই রসরাজের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ‘ধর্মীয় অবমাননার’ ছবিটি পোস্ট করেন। তারপরও কেন রসরাজকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতারা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই জোটের আয়োজনেই গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসে রসরাজের পরিবারের সদস্যরা। নমিতা রানী দাস জানান, তার তিন ছেলের মধ্যে রসরাজ দ্বিতীয়। আমার ছেলে পড়াশুনা জানে না। কোনোদিন স্কুলে যায়নি। বড় ভাই আর বাবার সঙ্গে বালিঙা বিলে মাছ ধরত।
রসরাজের ভাই দয়াময় বলেন, তাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে কেবল ছোটভাই পলাশ স্কুলে গিয়েছিল। আমরা দুই জন নামও লিখতে পারি না। খালি পলাশ দুই তিন ক্লাস পড়ছে। হামলার দিন কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে দয়াময় বলেন, গ্রামের মানুষ তাদের আগেই সতর্ক করায় বাড়ি থেকে পালিয়ে অন্য এক জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। তার বোনজামাই নেপাল জানান, দুই মাস আগে রসরাজ ২২০০ টাকা দিয়ে পুরনো একটি মোবাইল ফোন কেনেন। তবে তার পক্ষে ফেইসবুক চালানো সম্ভব ছিল না। রসরাজের পরিবার ভারতে পালিয়ে গেছে- এমন প্রচারের প্রতিবাদ জানান রসরাজের বাবা জগন্নাথ চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, আমরা কেউ ভারতে যাইনি। আত্মী-স্বজনের বাসায় থাকছি। রসরাজের মামলার দিন আদালতেও যাচ্ছি। ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার ঘটনা ‘সাজিয়ে’ কেউ পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও মন্দিরে হামলা চালিয়েছে বলে তার ধারণা। অন্যদের মধ্যে হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ড. প্রভাস চন্দ্র রায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।