শীতের পাখিরাও আমাদের বন্ধু!
হুমায়ুন আইয়ুব: আসছে শীত। কুয়াশা আচ্ছন্ন ভোর। শীতের সঙ্গে আসছে অতিথি পাখি। নানা প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশ পাখির দেশ। এ দেশের মানুষের ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে। সন্ধায় পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয় মানুষ। রাতের প্রহরে প্রহরে আল্লাহর তাসবিতে ডেকে ওঠে পাখি। সুরে সুরে গেয়ে ওঠে রবের প্রশংসার গান। প্রভুর ভালবাসা নিয়ে বেঁচে থাকা এ পাখিদের আমরা কেউ কষ্ট দেবো না। তীর-ধনুকের আঘাতে এদের শিকার করব না। বাসা ভেঙ্গে নীড়হারা করব না। পাখিদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে দেবো। অতিথি পাখিরা আমাদের বন্ধু। কেননা নবিজি পাখিদের ভালবাসতেন। পাখিরাও বন্ধু ছিল নবিজির। বালুকাময় আরব। চারদিকে ধু-ধু মরু প্রান্তর। প্রাকৃতিক কারণেই সেখানকার মানুষের মন রূঢ়। মায়াহীন মানুষের মন। প্রেমহীন সমাজ। মায়া-মমতা আর ভালবাসা নীরবে-নিভৃতে কাঁদে। আরবের উত্তপ্ত মরুতে রাসুল সা. এলেন শক্ত মাটির অনুর্বরমনা লোকদের কাছে। মমতার আঁচড় নেই মানুষগুলোর মনে। নবিজি সা. সে হৃদয়গুলো উর্বর করতে চাইলেন। পাষাণ মনে ভালবাসার বীজ রুইয়ে দিলেন। শরু হলো মানুষে মানুষে বন্ধন। হৃদয়ে হৃদয়ে প্রীতি।
নবিজির প্রেমে পড়ে মানুষ বদলে গেল। আলোর রঙ্গে রাঙ্গিয়ে উঠল পৃথিবী। কিন্তু নবি মুহাম্মাদ সা. যে শুধু মানুষ জয় করেননি, তার মায়ার বাঁধনে আটকা পড়েছে জঙ্গলের হরিণী, নদীর মাছ, বনের উড়ন্ত পাখি। দেশ ও সমাজের কাজে ব্যস্ত এ মহামানব যে পাখিদেরও কত আপন তা বোঝা যায় কোনো এক মা-পাখির আকুতি দেখে।
হাদিসের অন্যতম গ্রন্থ আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ আছেÑ কোনো এক সাহাবি পাখির ছানা ধরে আনলে রাসুল সা.-এর কাছে মা-পাখি ডানা মেলে উড়ে উড়ে আকুতি জানাতে লাগলেন। রাসুল সা. পাখিটির আর্তনাদে ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। ধমকের সুরে ঘোষণা করলেন- কে পাখির ছানা ধরে এনেছ। মা পাখিটিকে বিরক্ত করছ! জলদি যাও! ছানা দুটিকে তাদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দাও। আবু দাউদ শরিফ।
রাসুল সা.-এর সতেজ মন ভালবাসার এক উর্বর জমি। গাছপালার প্রতি টান। পশুপাখিদের জন্য মমতা। ফুলকলিদের জন্য প্রচ্ছন্ন এ মায়া মানবমনে সুখের ঢেউ তুলবে। মানবতার নবীর দেখানো পথে চলতে উৎসাহ জোগাবে। ক্ষমতার মসনদে বসেও যে সুরেলা পাখির সুরে অনুরিত হয়েছেন, শুধু মানুষের অধিকার নয়, নিশ্চিত করেছেন পাখিদের অধিকারও। ঘোষণা করেছেনÑ পাখিদের তাদের আপন নীড়ে থাকতে দাও। [আবু দাউদ শরিফ- ৩৯৩।]
পাখিদের বাসা ভাঙ্গা, বাচ্চা পেড়ে আনা, কষ্ট দেওয়া নবিজি র মোটেও সহ্য হতো না। মনে সইতো না। পাখিদের গানে, খোলা আকাশে স্বাধীন মনে ওড়া-উড়ি দেখে আপ্লুত হয়েছেন নবিজি ।
প্রভুর সুন্দর পৃথিবীকে সুশোভিত করেছে পাখিরা। পাখিদের ডানায় ডানায় মাওলার ছবি আঁকা। সুরের সানাইয়ে খোদার স্মৃতিমাখা। ওড়ার দৃশ্যে আল্লাহর ক্যালিগ্রাফি রাখা নদীর কলতানে যেমন আল্লাহর তাসাবিহ শুনেছেন রাসুল, তেমনি পাখিদের সুর লহরিতেও শুনেছেন আল্লাহর গুণগান।