‘চতুর্মুখী’ চ্যালেঞ্জে ‘কঠিনতর’ হচ্ছে নাসিক নির্বাচন
নুরুল আজিজ চৌধুরী ও হাবিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ: এ নির্বাচনে দীর্ঘদিন পর ভোটের জমজমাট লড়াইয়ের মুখোমুখি হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও দীর্ঘ দশ বছর যাবত ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে হতে যাওয়া শেষ নির্বাচন হচ্ছে এটি। পাশাপাশি তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীর পরিবর্তে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সেলিনা হায়াত আইভীকে কেন্দ্র মনোনয়ন দেওয়ায় দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিভক্তি। যদিও কেন্দ্র থেকে দুটি টিম আওয়ামী লীগের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে।
ফলে শুরু থেকেই নির্বাচনটা যতটা সহজ হবে ভেবেছিলেন নগরবাসী বর্তমানে সেটা আরও কঠিনতর হচ্ছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
তাদের মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আগাম জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যেমন এই নির্বাচনকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে দেখছেন, তেমনি দীর্ঘ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বৃহত্তম দল বিএনপিও তাদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে এই নির্বাচনটাকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নিয়েছেন।
কেননা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি যেই আন্দোলন করে আসছিলেন, তা বাস্তবায়নে এখন সরকারের প্রতি যে জনগণের জনসমর্থন নেই তা প্রমাণ করতে তাদের প্রার্থীদের মেয়র নির্বাচিত করতে হবে। তাই এই নির্বাচনটি বিএনপির জন্যও একটি ‘চ্যালেঞ্জ’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অপরদিকে, কাজী রকিব উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদোর্ত্তীণের পূর্বে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এটিই হচ্ছে শেষ নির্বাচন। সেই হিসেবে অতীতের নানা অভিযোগ খ-াতে এবার সিটি নির্বাচনকে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইসিও এটিকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নিয়েছে। আর যার প্রতিফলন সম্প্রতি আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানকেসহ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সর্তক করার নির্দেশনার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বিরোধীদল নারায়ণগঞ্জ জাতীয়পার্টি প্রস্তুতি নিলেও শেষতক দলীয় চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নির্দেশে সরে পড়েছে।
এদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে মহানগর সভাপতি আলহাজ আনোয়ার হোসেনের নাম কেন্দ্রে পাঠানোর পরেও মনোনয়ন বোর্ড জেলা সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে মনোনয়ন দেওয়ায় এখন পূর্বের মতোই তাকে শামীম ওসমানের সমর্থক নিজ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এবং একই সঙ্গে বিএনপির সঙ্গে লড়াই করতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হলেও দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এ নির্বাচনের ফলের ওপর জাতীয় রাজনীতির অনেক হিসাব-নিকাশ নির্ভর করবে। জাতীয় নির্বাচনের এখনো প্রায় দুবছর বাকি থাকলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দেশের প্রধান এই দুটি রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠিতে পরিণত হতে পারে। তাই জনগণের কাছে কোনো দলের গ্রহণযোগ্যতা কত বেশি, তা প্রমাণের জন্য মরিয়া হয়ে থাকবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
সেক্ষেত্রে বিএনপির দাবি অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনও তাদের মেয়াদকালের শেষ নির্বাচনটি স্মরণীয় করে রাখতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এ বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, নির্বাচন কমিশন এবং ওসমান পরিবারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।