আশ্রয়ের নামে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাণিজ্য কুতুপালং বস্তির আশপাশে বন কেটে নতুন বাড়িঘর নির্মাণের হিড়িক
উম্মুল ওয়ারা সুইটি উখিয়া থেকে ফিরে: রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার নামে শরণার্থী শিবিরগুলোর হোমরা-চোমরারা বাণিজ্য বেসাতি খুলে বসেছে। প্রাণের ভয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রথম দফায় পারাপারেই দুই দেশের সীমান্তের দালালদের জনপ্রতি ৭ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়ে আসছেন। এরপর পার হলেই আরও বড় সংকটে পড়ছেন।
অনিবন্ধিত বস্তিগুলোতে থাকতে বস্তির নেতাগোছের লোকজনকে দিতে হচ্ছে আরেক দফা চাঁদা। আবার ত্রাণের জন্য নাম লেখাতে এসব নেতাদের সঙ্গে চুক্তিতে আসতে হচ্ছে তাদের। ত্রাণের ভাগ অর্ধেক দিতে হবে এমন চুক্তিতেই নাম লেখাতে হচ্ছে তাদের।
গত বুধবার উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে সরেজমিন জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পার হয়ে এপারে আসার পর রোহিঙ্গারা নতুন করে আরেক বাণিজ্য সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ছেন। এসব সিন্ডিকেটের নেতারা শরণার্থীদের নিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন। তাদেরকে নিজেদের লোকজন দিয়ে ঘিরে রেখেছেন এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্যান্য যেকোনো মানবাধিকার সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিচ্ছেন নিজেদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে।
কুতুপালং বস্তির পুরনো বাসিন্দারা বলেন, বস্তিতে যারা নতুন এসেছে তারা সবাই বস্তির চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক ও তার দলবলকে টাকা দিয়ে ঢুকেছেন। পুরনোদের ছোট্টঘরগুলোতে জোর করে টাকার বিনিময়ে ১৬ থেকে ২৫ জনের দলকে পর্যন্ত থাকতে দিচ্ছেন। উখিয়া বাজারে নূর মিষ্টান্ন ভা-ারে আসা কুতুপালং বস্তির নতুন ও পুরনো একাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী এই প্রতিবেদককে বলেন, ওই বস্তির চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড ডিপো জাফরের নেতৃত্বে অসহায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে জমজমাট বাণিজ্যে মেতেছেন এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
কুতুপালং অনিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের এলাকায় নতুন নতুন ঘর উঠছে। এসব ঘরের কোনোটি টিনের লম্বা কলোনির মতো। আর পলিথিন, বাঁশ ও কাঠের ঘর উঠেছে গত একমাসে হাজারেরও বেশি। এসব ঘরের জন্য রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন পরিমাণ টাকা দিতে হচ্ছে। পরিশোধ করতে হবে মাসিক ভাড়াও। ২৭ নভেম্বর কুতুপালং অনিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পে আসা রোহিঙ্গা আবুল হাফিজ জানান, তার বাড়ি মিয়ানমারের নাইশাপুরীতে। এখানে এসে তিনি এক স্বজনের ঘরে আশ্রয় নেন। কিন্তু ওই ছোট্ট ঘরে তার পক্ষে বিশাল পরিবার নিয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তিনি আবু সিদ্দিককে ১ হাজার টাকা দিয়ে একটি ঘরে ওঠেন। প্রতিমাসেই এই ভাড়া তাকে গুণতে হবে। আবার বস্তির কর্তা ব্যক্তিরা বলেছেন, সাংবাদিক এবং মানবাধিকারের লোক আসলে তাদের সঙ্গে কথা বলা যাবে না।
এভাবে শত শত পরিবারের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিচ্ছে এই সিন্ডিকেট। বলা হয়েছে, ত্রাণ পাওয়া গেলে তার অর্ধেক ভাগাভাগি করে নিতে হবে এবং কাউকে বললে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)কে বলে আবার ওপারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এসব বিষয় অস্বীকার করে চেয়ারম্যান সিদ্দিক বলেন, আমরা পারলে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছি। লোকজনকে এনে তাদের সাহায্য আনার চেষ্টা করছি। এই বিপদের সময় এক মুসলমান কিভাবে অন্য মুসলমানের টাকা হাতিয়ে নেবে। এই হারামের টাকা সে খেতে রাজি নয়। কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ আরমান শাকিল বলেন, রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গাদের বাইরে তার কিছু জানা নেই। তিনি শুনেছেন অনিবন্ধিত ক্যাম্পে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী, পুলিশ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের অমানবিক নির্যাতন ও বর্বরতার শিকার অধিকাংশ রোহিঙ্গাই কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় পাচ্ছে। সম্পাদনা: আনোয়ার