দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাভা সাগরে ডুবে যাওয়া ব্রিটিশ ও ডাচ-যুদ্ধ জাহাজগুলো উধাও
কামরুল আহসান: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ১৯৪২ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাবা সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল তিনটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ, ঠিক একই জায়গায় ডুবে গিয়েছিল আরও তিনটি ডাচ-যুদ্ধজাহাজ। এসব জাহাজডুবির ঘটনায় মারা গিয়েছিল মিত্রবাহিনীর শতাধিক সৈন্য। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদার্থে সে জায়গাটা চিহ্নিত ছিল সমুদ্রবক্ষের সমাধিক্ষেত্র হিসেবে। ডুবে যাওয়া জাহাজগুলোর ধ্বংসাবশেষ সেখানেই রেখে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সমুদ্রের গভীর থেকে সেসব এখন সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অবৈধ ধাতু অপসারণকারীরা সেগুলো সব সরিয়ে ফেলেছে।
বিশাল ক্রজার এইচএমএস এক্সেটার, এইচএমএস এনকাউন্টার এবং এইচএমএস ইলেক্ট্রা জাপানবাহিনীর আক্রমণে ডুবে গিয়েছিল ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে। অবৈধ ধাতু অপসারণকারীরা সমুদ্রের নিচ থেকে জাহাজের ধ্বংসাবশেষগুলো সম্পূর্ণ উধাও করে দিয়েছে। ডাচ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ডাচ সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘যুক্তরাজ্যের সরকার এই অবৈধ চোরাকারবারিদের ব্যাপারে অভিযোগ করে বলেছে, মানুষসহ ডুবে যাওয়া জাহাজগুলোর ধ্বংসাবশেষ চুরি করা একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। আমরা ইন্দোনেশিয়ার সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। আমরা আমাদের পূর্ণ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছি এ ব্যাপারে যথার্থ উদ্যোগ গ্রহণ করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এটা একটা পবিত্রস্থানকে অবমাননা। কারণ, ওখানে অনেকের অনেক ভালবাসার মানুষ ঘুমিয়ে আছে।’
তিনটি যুদ্ধজাহাজের সঙ্গে শতাধিক ব্রিটিশ সৈন্য মারা গিয়েছিল। এইচএমএস ইলেক্ট্রা যুদ্ধজাহাজের ১৭৩ নাবিকের মধ্যে মাত্র ৫৪ জন বাঁচতে পেরেছিল। এইচএমএস এনকাউন্টার জাহাজের ৮ জন সৈন্য নিহত হয়েছিলেন। এইচএমএস এক্সেটার জাহাজের অধিকাংশ সৈন্য জাপানি নাবিকরা উদ্ধার করেছে। আগামী বছর তাদের সমাহিতের ৭৫ বছর পালন উপলক্ষে সেখানে শ্রদ্ধানিবেদার্থে যাওয়া হবে, ঠিক সেই মুহূর্তে এমন একটি খবর তাদের খুব বেদনাহত করেছে বলে জানিয়েছেন ডাচ প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
১৯৪২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সেখানেই ডুবে গিয়েছিল তিনটি ডাচ-যুদ্ধজাহাজ।
৯০০-এর অধিক ডাচ সৈন্য এবং ২৫০ জন ডাচ-ইন্দো সৈন্য সে সময় জাপানবাহিনীর হাতে মারা যায়, যারা মিত্রবাহিনীর সৈন্য হিসেবে যুদ্ধ করছিল। ৬০ বছর পর ২০০২ সালে সেগুলোর খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল জাপানি নাবিকদের মাধ্যমে। কিন্তু, এখন তাদের অস্তিত্বও আর নেই। জাহাজের বিশাল বিশাল অংশগুলোও অদৃশ্য হয়ে গেছে। এখন শুধু মাঝে মাঝে ছোটখাট কিছু কাঠের টুকরো ভেসে ওঠে, যা দিয়ে জায়গাটা চিহ্নিত করা যায়। মিত্রশক্তির নৌবাহিনীর কমান্ডার, ডাচ রিয়ার অ্যাডমিরাল কারেল ডুরম্যানও সে সময় মারা গিয়ের্ছিলেন। তার মৃতদেহও সমাহিত আছে সেই ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে। সমুদ্রগর্ভের সমাধিক্ষেত্র থেকে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলা একটি মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
ডাচ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছে, ‘খবরটি শোনার পর ডাচ নাবিক ও যুদ্ধ-স্মরণী অফিস থেকে এ ব্যপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে’। ডাচ যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র ফাউন্ডেশনের পরিচালক থিয়ো ভেলিউগেলস তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘যারা সেখানে মারা গিয়েছিল তাদের আত্মা শান্তিতে থাকুক। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি