একান্ত সাক্ষাতকারে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন তিন জোটের রূপরেখা ভঙ্গ করে স্বৈরাচারের সঙ্গে আপস করেছে আওয়ামী লীগ
শাহানুজ্জামান টিটু : আগামী ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতনের ২৬ বছর পূর্তি পালন করবে বিএনপি। সেদিন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ১৫ দল (পরে তা ভেঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ৮ দল ও বামপন্থিদের নেতৃত্বাধীন ৫ দল) ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ৭ দল। এ তিন জোটের রূপরেখার ভিত্তিতে স্বৈরশাসনের অবসান হয়। দীর্ঘ এ সময়ে তিনদলের সেই রূপরেখা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে আর কেনই বা গণতন্ত্র বারবার হোঁচট খেয়েছে, ২৬ বছর পর বিএনপিই বা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার নিয়ে কী ভাবছেÑ এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, বিএনপি স্বৈরাচারের সঙ্গে আপস করেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ তিন দলের রূপরেখা ভঙ্গ করে স্বৈরাচারের সঙ্গে আপস করেছে। তারা এখন দিনটিকে স্মরণ করে না। বরং তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর বিএনপি দিনটি স্মরণ করে।
বিএনপির এ নেতার কাছে প্রশ্ন ছিলÑ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর আজ ২৬ বছর পূর্তি হচ্ছে। দীর্ঘ এই সময়ে গণতন্ত্র, তিন দলের রূপরেখা, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপনার মূল্যায়ণ কি? জবাবে ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, সেদিন গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে যে সামরিক শাসন এসেছিল সেটাকে এদেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। এবং গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন করে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিল। বিএনপি যেহেতু গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি সেজন্য আমরা এ দিনটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। আর আওয়ামী লীগ সেসময়ও স্বৈরাচারী সরকারকে সহযোগিতা করেছে। ৮৬ সালের নিবার্চনে গিয়ে। এবং পরবর্তীকালে তারা নিজেরা সমঝোতা করে বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিতে বিরোধী দলে এসেছে, সরকারে এসেছে। সেজন্য আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী সরকারের পতনের দিনটাকে মনে করতে চায় না। আর এখন আওয়ামী লীগ এরশাদের মতো স্বৈরাচার বা তার থেকেও বেশি স্বৈরাচারী চরিত্র ধারণ করেছে। সেজন্য তারা তো আর স্বৈরাচার পতন দিবস পালন করা তাদের জন্য হাস্যকর হবেÑ এজন্য তারা পালন করে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা এখনো মনে করি, ওই সময় যে অবস্থা ছিল স্বৈরাচারী প্রশাসন, এখনো সেই স্বৈরাচারি, ফ্যাসিস্ট শাসন, শাসক হিসেবে আওয়ামী লীগ পরিণত হয়েছে। সুতরাং এরা নিজেরাই স্বৈরাচারী চরিত্র ধারণ করেছে।
বিএনপি এখনো গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করছি সেজন্য আমরা স্বৈরাচার পতন দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিই এবং জনগণকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, স্বৈরাচার যেই হোক, যত শক্তিশালী হোক তার পতন অবশ্যই আসবে।
স্বৈরাচার পতনে তিন দলের রূপরেখার শর্তে কি ছিল ? ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, সেদিন আমাদের প্রধান শর্তই ছিল গণতন্ত্র এবং সেই গণতন্ত্রের জন্যে একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেই সুষ্ঠু নিরেপেক্ষ নির্বাচনের জন্যই তখন একটা নিরপেক্ষ সরকারের কনসেপট আসে। এবং ৯১-তে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা হলো। সেসসময় তো এটা সংবিধানের মধ্যে ছিল না। সমঝোতার ভিত্তিতে হয়েছিল। পরবর্তীতে ৯৬-তে আমরা সেই কনসেপটাকে অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে কনসেপট ছিল সেটাকে আমরা সংবিধান অন্তর্ভুক্ত করি। যদিও এটা শেখ হাসিনারও দাবি ছিল। আমরা স্বৈরাচার পতনের সময় যে সমঝোতার আলোকে আমরা সব সময় কাজ করছি। আর বর্তমান সরকার সেটা ভঙ্গ করে কাজ করছে এবং তাদের সাথে সহযোগিতা করছে। এখনতো তারা সরকারে ও বিরোধী দলে একাকার হয়ে সেই স্বৈরাচারের সাথেই সখ্য আওয়ামী লীগের। সেই সময় যেটা সমঝোতা হয়েছিল পুরোপুরি আওয়ামী লীগ এটা ভঙ্গ করেছে। এবং স্বৈরাচারের সঙ্গে আঁতাত করে দেশ চালাচ্ছে।
৯১ সালে একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু হয় ২৬ বছর পরে এখন আপনি কীভাবে দেখছেন এবং আপনার দল বিএনপি আগামীতে কি ভূমিকা নেবে জানতে চাইলে বিএনপির এ নীতিনির্ধারক বলেন, আমরা গণতন্ত্র হারিয়ে ফেলেছি। সেজন্য প্রথম থেকে যেমনভাবে আওয়ামী লীগ আমাদের সেই সমঝোতার মর্যাদা রাখেনি, সেই সমঝোতার আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়েছিল সেটাও তারা বাতিল করেছে। যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন সেই স্বৈরাচারকে তাদের সঙ্গে নিয়েছে। অতএব সে সময়ে আমাদের যে সমঝোতা ছিল আওয়ামী লীগ তা ভূলুণ্ঠিত করেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, কোনো দেশেই স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদী কোনো সরকার বেশিদিন টিকে নাই। গায়ের জোরে টিকে নাই। এ ধরনের সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে পুনঃগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একই ধরনের আন্দোলন এখনো চলছে। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন