যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন, নৈরাজ্য বন্ধে ৭ সুপারিশ সিএনজি অটোরিকশা চলাচলে নৈরাজ্য মাসে অবৈধ বাণিজ্য ১২ কোটি টাকা
আনিসুর রহমান তপন: সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া ৬০ ভাগ বৃদ্ধির পরও এ খাতে প্রতি মাসে ১২ কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল শনিবার রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে যাত্রী কল্যাণ সমিতি অয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদনে এ ভাড়া নৈরাজ্যের এ চিত্র উঠে এসছে বলে জানায়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সিংহভাগ অটোরিকশা চালক যাত্রীর কাক্সিক্ষত গন্তব্যে যেতে চায় না, মিটারে ভাড়া নিতে অনীহা প্রকাশসহ মিটারে গেলেও বকশিশের দাবি করে তারা। এছাড়াও যাত্রীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগও করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এ কারণে এ সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়নি বলে সংগঠনটির দাবি।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করে জানায়, রাজধানীতে কয়েক হাজার অবৈধ অটোরিকশা ও প্রাইভেট সিএনচি চলাচল করছে বলে অভিযোগ করা হয়। তাছাড়া কিছু অসাধু পুলিশ সার্জেন্ট, টিআই, পিআই এবং সাংবাদিক এর নামে ১৫ হাজার ৫০টি অটোরিকশা রাজধানীতে বছরের পর বছর অবৈধভাবে চলাচল করছে। এ কারণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও এই সেক্টরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে দাবি করা হয়।
এছাড়া রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ, দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের ইজারাদাররা, রেলওয়ে স্টেশনের ইজারাদাররা, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে শ্রমিক ইউনিয়নের নামে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ইজারার নামে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে সংগঠনের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনটি তৈরির আগে দীর্ঘ এক মাস যাত্রী কল্যাণ সমিতির ১৫ জন প্রতিনিধি রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করতে গিয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ৮টি সুপারিশ পেশ করেছেন।
সিএনজি অটোরিকশার নৈরাজ্য বন্ধে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সুপারিশগুলো হল, ১) ঢাকা মহানগরীর অটোরিকশা সংকট নিরসনকল্পে সিএনজি অটোরিকশার সিলিং প্রথা বাতিল করা। ২) অটোরিকশার সার্ভিস নীতিমালা-২০০৭ বাস্তবায়ন করা। ৩) প্রতিটি অটোরিকশায় যাত্রীর আসনের সামনে ভাড়ার তালিকাসহ মালিক, চালক, বিআরটিএ’র অভিযোগ কেন্দ্র, পুলিশের ট্রাফিক অভিযোগ কেন্দ্রের নাম ও ফোন নম্বরসহ একটি নোটিশ ঝুলানোর ব্যবস্থা করা। ৪) ঢাকা মহানগরীতে ভিন্ন জেলায় নিবন্ধিত ও প্রাইভেট অটোরিকশাসমূহ নগরীতে চলাচল বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া। ৫) সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া, জমা ও ইকোনোমিক লাইফ বৃদ্ধির পূর্বে গণশুনানির উদ্যোগ নেয়া। ৬) অটোরিকশা চালকদের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি ট্রাফিক ইন্সপেক্টরদের নেতৃত্বে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা। ৭) মিটার টেম্পারিং বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মিটার চেকিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হানিফ খোকন, ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্লাহ ভুলু, নাগরিক সংহতির সভাপতি শরীফুজ্জামান শরিফ প্রমুখ। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম