জাপানি অর্থায়নে ওডিএ প্রকল্প নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে জাপান যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী
হাসান আরিফ: বাংলাদেশে জাপানি অর্থায়নে ওডিএ প্রকল্পগুলোতে নিয়োজিত জাপানিদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে টোকিও যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কারণ বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানিদের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই জাপানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে অর্থমন্ত্রী ৭ থেকে ১০ ডিসেম্বর তিন দিনের সফরে জাপান যাচ্ছেন।
অর্থমন্ত্রীর জাপান সফর ৭ তারিখ শুরু হলেও তিনি আজ জাপানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন। পথে দুই দিনের জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করবেন তিনি।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসীদের হামলায় যেসব বিদেশি মারা যান তার মধ্যে সাতজনই জাপানি নাগরিক। তাদের সবাই মেট্রোরেল প্রকল্পে কাজ করছিলেন। এ ঘটনার পর এখানে কর্মরত জাপানিদের মনে একটি ভীতির সৃষ্টি হয়। একই সাথে হুমকির মুখে পড়ে জাপানি অর্থায়নে নির্মিতব্য মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ ও মেট্রোরেল প্রকল্প। এখন এই দুই প্রকল্প সচল রাখতে জাপানিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন অর্থমন্ত্রী। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জাপানিদের বলা হবেÑ বাংলাদেশে অবস্থানরত সব জাপানিকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
এবারই প্রথম অর্থমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর তালিকায় ঢাকার পুলিশ কমিশনারও রয়েছেন। কারণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত পুরো বিষয়টি তার পক্ষ থেকে জাপানিদের কাছে তুলে ধরা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে জাপানি অর্থায়নের প্রকল্পে কর্মরত জাপানি নাগরিকদের সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাপান চাইলে তাদের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো যেতে পারে। তারপরও যেন জাপানিরা এখানে আসেন, বিনিয়োগ করেন ও কাজ করেন। কারণ বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানিদের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
জাপান সফরকালে অর্থমন্ত্রীর সাথে পাঁচ সদস্যের একটি টিমও থাকবে বলে জানা গেছে। এ টিমের সদস্যের তালিকায় রয়েছেন স্বরাষ্ট্র, যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন করে অতিরিক্ত সচিব। থাকছেন পুলিশ কমিশনার ও পাওয়ার ডিভিশনের একজন যুগ্ম সচিব।
জানা গেছে, জাপানে অবস্থানকালে দেশটির বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করবেন অর্থমন্ত্রী। একই সাথে জাপানি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। একই সাথে তার জাইকার সদর দফতর পরিদর্শনের কথা রয়েছে। সেখানে তিনি জাইকার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করবেন। আলোচনার তালিকায় অগ্রাধিকার পাবে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প ও মেট্রোরেল। হলি আর্টিজনের ঘটনার পর মাতারবাড়ি প্রকল্প প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ৩৬ হাজার কোটি টাকার এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়াই স্থগিত করে দেয় জাপান। এখন প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জাইকার কাছে আবেদন জানানো হবে।
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে অবস্থিত। এখনে ৬০০ মেগাওয়াট করে দুটি কেন্দ্রের মাধ্যমে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে জাপান দেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে জাইকার অর্থায়নে রাজধানী ঢাকায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেল রুট-৬ প্রকল্পে জাইকা সহায়তা দিচ্ছে ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণেও অর্থ দিচ্ছে সংস্থাটি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগিতা প্রকল্পে ৪৭ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে জাপান।