লুই কানের মূল নকশা দেখলেন প্রধানমন্ত্রী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে মত
জাতীয় আর্কাইভে সংরক্ষিত হবে সংসদের নকশা
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা লুই আই কানের করা জাতীয় সংসদের মূল নকশা দেখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার মাগরিবের বিরতির পর তিনি নকশা উন্মোচন করেন এবং দেখেন। প্রধানমন্ত্রী এসময় নকশা বাস্তবায়নে দ্রুত এবং কার্যকর উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেন। নকশার বাক্স উন্মোচনের সময় প্রধানমন্ত্রী বেশ উৎফুল্ল ছিলেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এর আগে বিকালে কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সংসদ ভবন এলাকার নকশার অনুলিপি দেশে আসার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরে মাগরিবের বিরতির পর নকশার কপি উন্মোচন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী, সংসদ সচিবালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, একটি টিম শিগগিরই তাকে (প্রধানমন্ত্রীকে) নকশার বিস্তারিত জানাবেন। এরপর তিনি প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। সংসদ সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া থেকে আনা লুই আই কানের তৈরি জাতীয় সংসদের মূল নকশা শিগগিরই পাঠানো হবে জাতীয় আর্কাইভে। বর্তমানে এটা সংসদ সচিবালয়ে সংরক্ষিত আছে। জাতীয় আর্কাইভে সর্বসাধারণের জন্য তা খুলে রাখা হবে। একইসঙ্গে মূল নকশার আরেকটি কপি পাঠানো হবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। নকশা অনুযায়ী সংসদ সচিবালয়ের কাজ বাস্তবায়ন করতেই মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হবে। তবে মূল নকশার কপি সংরক্ষিত থাকবে সংসদ সচিবালয়ে। সাধারণ মানুষ যাতে নকশা দেখতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।
গত ১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে নকশার কপি সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছায়। ওইদিন রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে সংসদের মূল নকশা সংগ্রহ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রথম থেকে বকেয়া পরিশোধ নিয়ে টানাপড়েন চলে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের দাবি ছিল চাহিদা অনুযায়ী লুই আই কান পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরি করেননি। অন্যদিকে লুই আই কানের প্রতিষ্ঠানের দাবি বাংলাদেশ যে পরিমাণ টাকা দেওয়ার কথা ছিল তা পরিশোধ করেনি। পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভে নকশাগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। পেনসিলভেনিয়া কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের কাছে পুরনো বকেয়া হিসেবে প্রায় এক কোটি টাকা দাবি করে। পাল্টা যুক্তি তুলে ধরে বাংলাদেশ। এ নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে চলে রশি টানাটানি। শেষ পর্যন্ত ৬১ হাজার ডলারে রফা হয়। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০ লাখ। পরে বাংলাদেশ ওই টাকা পরিশোধ করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে নকশার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বকেয়া পাওনা পরিশোধের পর পেনসিলভেনিয়া কর্তৃপক্ষ মূল নকশা দিতে রাজি হয়।
গত ৬ জুন সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পেনসিলভেনিয়া যান। তার সঙ্গে ছিলেন স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন শাখা-৯) অধিশাখা মো. মনিরুজ্জামান, গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব, স্থাপত্য অধিদফতরের সহকারী স্থপতি সাইকা বিনতে আলম।
এর আগে বিষয়টি নিয়ে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ৫ জন যান নকশা নির্ধারণ করতে। কারণ সংসদ ভবন ঘিরে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ৮ হাজার নকশা। এর মধ্যে ৯শর মতো নকশা চূড়ান্ত করেন তারা। স্থাপত্য অধিদফতরের পরামর্শে এসব নকশা চূড়ান্ত করা হয়।
২০১৪ সালের ১ জুন নকশা সংগ্রহে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও এ নিয়ে উদ্যোগ নেন। তিনি নির্দেশ দেন তখনকার সংসদ সচিব আশরাফুল মকবুলকে। এরপরই সচিব বৈঠক করেন স্থাপত্য বিভাগের প্রধান ও গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে। ঘোষণা দেন নকশা দেশে আনতে লুই ইসাডোর কানের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে একটি টিম যাবে বিদেশে।
একই বছরের ২৭ মে আবারও বৈঠক হয় সংসদ কমিশনের। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আগের কমিশন বৈঠকের সিদ্ধান্তের অগ্রগতি জানতে চান। এরই আলোকে প্রধানমন্ত্রী নকশা সংগ্রহের বিষয়টি জানতে চান। তবে কোনো জবাব দিতে পারেনি সংসদ সচিবালয়। পরে প্রধানমন্ত্রী আবারও নির্দেশ দেন নকশা সংগ্রহের। এ সময় সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, টাকার অভাবে নকশা আনা সম্ভব হচ্ছে না। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, যত টাকা লাগে তা দেওয়া হবে। তারপরও মূল নকশা দেশে আনতে হবে।
মূলত এরপরই নড়েচড়ে বসে সংসদ সচিবালয়। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই আই কান এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দীর্ঘদিন পর ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।