অস্তিত্ব সংকটে ইইউ প্রথমে ব্রেক্সিট, এরপর ট্রাম্প, এখন ইতালি
লিহান লিমা: জুলাইতে ব্রেক্সিট এসে ইউরোপিয় ইউনিয়নে একটি ঐতিহাসিক ধাক্কা দিয়ে গেল, নভেম্বরে আসলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, ৩০ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হিলারিকে টেক্কা দিয়ে ব্যবসায়ী থেকে হয়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এখন ইতালির তরুণ নেতা মেট্রো রেনজির মাথায় ঘুরছে পরিবর্তনের হাওয়া, ১৯৪৮ সালের সংবিধান পাল্টে নতুন করে ইতালিয়ান পার্লামেন্ট গড়তে চাইছেন ৪১ বছরের এই প্রধানমন্ত্রী। ৩৫০ থেকে সিনেটরের সংখ্যা নামিয়ে আনতে চাইছেন ১০০-তে।
সিনেটের সদস্যদের প্রদেশগুলো থেকে মনোনীত করা হবে। রেনজির মতে, ইতালিয়রা যদি ‘হ্যাঁ’ ভোট দেন, ৪০ শতাংশ ভোট পেলেই একটি দল সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে ও সরকার স্থায়িত্ব পাবে ও অতি প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজগুলো শুরু করতে পারবেন। তবে অধিকাংশ জরিপে ‘না’ পক্ষের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনার কথাই বলা হচ্ছে। ইতালিয় অর্থবাজারের এক জরিপে দেখা গিয়েছে, গণভোটে ‘না’ জিতলে, ইতালির ইউরো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দাঁড়াবে নাকি ২০ শতাংশে। ‘না’ ভোট হলে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের মত ক্ষমতাচ্যুত হতে পারেন রেনজি, ইতালির ভাগ্য চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ডানপন্থী পপুলিস্ট পার্টি ‘ ফাইভ স্টার মুভমেন্ট’ এর হাতে, তার নেতা সাবেক কমোডিয়ান বেপে গ্রিলো। এই দলটি ইতালির ইউরো জোন থেকে বের হওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। মেট্রো ব্যাংক ইউকে এর প্রধান বিনিয়োগকারী জেমি রিউবেন বলেন, ‘ইতালির এই নির্বাচন ইউরো জোনের তীব্র সংকটময় মুহূর্ত, ট্রাম্পের নির্বাচন বা ব্রেক্সিট নিয়ে মানুষ অতটা মাথা ঘামায়নি কিন্তু তাই ঘটেছে।’ বৈদেশিক বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, যদি গ্রিলো ক্ষমতায় আসেন তিনি ইউরো থেকে বের হওয়ার জন্য গণভোটের আয়োজন করবেন ও ইতালিয়ান মুদ্রা লিরাতে ফিরে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন।
অন্যদিকে অস্ট্রিয়ায়ও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন। দেশটির এফপিও’র প্রার্থী নর্বার্ট হফার মে মাসে গ্রিন পার্টি সমর্থিত আলেক্সান্ডার ভ্যান দার বেলেনের কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন। অনিয়মের অভিযোগে দেশটিতে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নর্বার্ট হফার যদি জিতে যান, হোঁচট খাবে ইউরোপের মূলধারার রাজনীতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের কোনো দেশে এই প্রথম কোনো উগ্র-ডানপন্থী, বর্ণবাদী, অভিবাসন ও অর্থনৈতিক পুনঃবণ্টনবিরোধী নির্বাচিত হবেন। ফ্রান্সে আসন্ন নির্বাচনে মূলধারার রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন আরেক ডানপন্থী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া ফিলন। নেদারল্যান্ডে এগিয়ে আছেন কট্টর মুসলিম ও অভিবাসন-বিরোধী রাজনীতিক গ্রিট উইল্ডার্স। মুক্ত দুনিয়ার শেষ বাতিঘর জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের মেয়াদও শেষ।
ইউরোপিয় ঐক্যের অংশীদার ইতালি যদি ইইউ থেকে বের হয়ে যায় তাহলে ইইউ পতাকার অস্তিত্ব তীব্র সঙ্কটে পড়বে। ইউরোপিয়ান স্বপ্নের শেষ হতে পারে ইতালির বের হয়ে যাওয়ার মধ্যদিয়ে, ভেঙ্গে যাবে ইউরোপের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি
সূত্র: সিএনএন, পলিটিকো, বিবিসি